Pritam Pal
LEATHER GOODS TECHNOLOGIST | INDEPENDENT FILM MAKER | EDITOR
মনে রাখবে রাজারহাট, প্রতিবাদী বিনিদ্র রাত
পথের শেষে একটা ঘর, আর জি কর আর জি কর । শিল্পী অতনু বর্মন-এর থেকে ধার করেই শুরুটা
লিখলাম। গতকালই এক দৈনিকের প্রথম পাতার লিড-প্যারায় পড়ছিলাম “দেশ স্বাধীন হয়েছিল এক
১৪ আগস্ট মধ্যরাতে। ৭৭ বছর পর সেই দিনই পথে নামছেন এ রাজ্যের মেয়েরা। দাবী স্বাধীনতারই।
স্বাধীন ভাবে, নির্ভয়ে বাঁচার। আর জি কর মেডিক্যালে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে
রাতের পথে নামার ডাক দিয়েছেন মেয়েরা। স্লোগান উঠেছে- ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ “।
হ্যাপি ফাদার্স ডে
ছবিটা সত্তর
কিংবা আশির দশকের উত্তর কলকাতার কোনও এক অ্যামেচার থিয়েটার-এর। ছুরি হাতে
আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে যে ছেলেটি অভিনয় করছে, গলপটা তাঁর। মঞ্চের বাইরের গল্প,
জীবনের গল্প। হাওড়া জেলার কোনও এক প্রত্যন্ত গ্রামে কাটানো শৈশব, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে মায়ের সঙ্গে ছেলেটি যখন এই শহরে আসে তখনও শ্যামবাজারের
মোড়ে নেতাজি ‘দিল্লী চলো’ বলেন নি। এই শহর দেখেও নি নকশাল আন্দোলন কাকে বলে।
মা-
দুই দাদা, যৌথ সংসারে তাঁর বেড়ে ওঠা। বাবাকে তাঁর মনে পড়ে না। দুই দাদাই তাঁর
পিতৃতুল্য। চারজনের সংসারের ভার দুই অবিবাহিত দাদার ওপর। খেলাত বাবু লেনের
দু’কামরার ঘরে মাথা গোঁজার ঠিকানা থাকলেও, মালিকানা ছিল অন্য কারোর। নিজের বলতে
শূন্য, নিঃস্ব। তবে সে চোখে ছিল স্বপ্ন, মনে ছিল তাগিদ আর দেহে ছিল জোশ। কৈশোরের
উচ্ছ্বলতায় উত্তর কলকাতার মধ্যবিত্ত সংস্কৃতি-কৃষ্টি ক্রমশঃ আকর্ষণ করে তাঁকে। নিজের অজান্তেই
ভালোবেসে ফেলে পাড়ার ক্লাব ফুটবল আর নাটক কে। মেজদার ছিল একটা শখের আগফা ক্লিক
থ্রি ক্যামেরা। সেই যন্তর খানাও বেশ টানত ছেলেটার কৈশোর মনকে। ট্রামের ঘণ্টার
আওয়াজে, গুল-কয়লার ধোঁয়ায় সকাল হওয়া সেই কলকাতায় ছেলেটা ভোর হলে দুধ আনতে যায়-
বাজার করে-পড়তে বসে, বেলা গড়ালে স্কুল, বিকেল হলে ফুটবল মাঠ কিংবা নাটকের মহড়া,
সন্ধ্যে নামলে আবার পড়া তারপর আবার পরের দিনের অপেক্ষা। পড়াশোনায়ও মন্দ নয় সে।
অঙ্কে নিরানব্বই? নৈব নৈব চ। এক্কেবারে একশোয় একশো। দাদাদের শাসনে স্ব-নির্ভরতার
প্রাথমিক পাঠটা খুব ছোটবেলাতেই শিখেছিল সে। কাজেই নিজের কাজ নিজেই গোছাতে জানত সে।
তারপর
সংসারে এলেন নতুন বৌদি। বিয়ের পর ট্রাম লাইন ধরে, জলোত্তমা কলকাতায় উচ্চ শিক্ষার
জন্য তিনিও যেতেন
কলকাতার উইমেন্স কলেজে। কিন্তু কে জানত বিয়ের একবছরের মাথায় তাঁর কপালে লেখা ছিল
বৈধব্য যোগ? শনিবার, বিবাহ বার্ষিকীর ঠিক পরের দিনটাই বোধ হয়। শ্যামবাজার পাঁচ
মাথার মোড়ে আপার সার্কুলার রোড থেকে আসা এক পাঞ্জাব বডি লরির ধাক্কায় দাদা ছিটকে
গিয়ে পড়েছিলেন আজকের কুমার্স কন্সার্নের দিকটায়। শনিবারের সন্ধ্যায় আর জি কর
মেডিকেল কলেজে সেই দাদার দেহ শনাক্ত করলেন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকা আরেক দাদা।
লাশকাটা ঘরে ময়নাতদন্তের সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধুর হতে থাকল কিশোর ছেলেটার পায়ের তলার
মাটি। ঝাপসা হতে থাকল স্বপ্ন গুলো। কারন ওই দাদাই তো ছিলেন সব স্বপ্নের দিশারী। স্বপ্ন
গুলো থিতিয়ে গেলেও নতুন সংগ্রামের জেদটা বাড়তে থাকল। সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব গিয়ে
পড়ল আরেক দাদার ওপর। ততদিনে কলকাতা উত্তাল। শিক্ষিত-সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিপ্লবী
সন্তানদের লাশ পড়ছে ময়দানের ঘাসে।
মা
আর দাদার সংসারে, পড়াশোনা, পাড়া-ফুটবল, নাটকের পাশাপাশি ছেলেটা দক্ষ হতে শুরু করল
ব্রতচারী, সেন্ট জন প্রবর্তিত প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরী চিকিৎসায়। এভাবেই নিম্ন
মধ্যবিত্ত অভাবের সংসারে কৈশোর পেরিয়ে যৌবন। ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ডাক্তার
হবে। কিন্তু দাদার ওপর আর্থিক নির্ভরতার চিন্তা তাঁকে বাধ্য করল বানিজ্য বিভাগে
যেতে। মায়েরও বয়স বাড়ছে। মাকে সাহায্যের জন্যও দরকার কাউকে। অতএব বিয়ে করলেন দাদা।
এভাবেই
স্কুল পেরিয়ে কলেজ। মাথায় নাটক আর ফুটবলের পোকা। পাশাপাশি হাতখরচার জন্য টিউশনি আর
অডিট ফার্মে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ। পাড়ায় থাকতেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়,
জগন্নাথ বসুর মতন ব্যাক্তিত্ত্ব। এমনই একবার নাটক নামবে তাঁদের। ছেলেটা কিছু জানতে
গিয়েছিল জগন্নাথ বসুর কাছে। কথাবার্তার পর জগন্নাথ বসু বললেন, “বাড়িতে কে কে
আছেন?”
- মা, দাদা আর বৌদি
- কত বছর ধরে নাটক কর?
- স্কুল থেকেই।
- নাটক করা মানে জানো?
- না... মানে...
- ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।
বড্ড
গায়ে লেগেছিল কথাটা। তারপর পেপারের একটা বিজ্ঞাপন তাঁকে ‘গ্রন্থাগার বিজ্ঞান’-এর
দিকে আকর্ষিত করে। ছ’মাসের আবাসিক সার্টিফিকেট কোর্স। ফিরে এসেই অল্প মাইনের চাকরি।
নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু গ্রন্থাগারিক হতে গেলে যে ‘গ্রন্থাগার বিজ্ঞান’ নিয়ে পড়াশুনো করতে হয়
সেটাই তো অনেকের অজানা। চাকরির প্রথম পর্বে পদে পদে অপমান, হেনস্থা। আবার নিজেকে
প্রমান করার লড়াই। ততদিনে কলকাতার পর্ব চুকিয়ে দাদা বাড়ি করে এসেছেন
শান্ত-নিরালায়। কিন্তু ওই যে ছেলেটার জেদ।
প্রথমে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্নাতক, তারপর বানিজ্য শাখায়।
১৯৮২
সাল। দিল্লীর দরবারে তখন এশিয়াডের জন্য সাজো সাজো রব। পুজোর ঠিক পরে পরেই কলকাতার নিউ
থিয়েটার্স ষ্টুডিও তে বাংলার প্রতিনিধি দলকে মহড়া দেওয়াচ্ছেন নৃত্য শিল্পী শম্ভু
ভট্টাচার্য। সুর দিচ্ছেন পন্ডিত রবিশঙ্কর। সেই দলেই মহড়া দিচ্ছে ছেলেটা। নভেম্বরের
১৯ তারিখ দিল্লীর যে মঞ্চে ইন্দিরা গান্ধী বসে আছেন সেই মঞ্চের সামনেই বাংলার দলের
হয়ে ‘নবান্ন’ নাচে অংশগ্রহন করে ছেলেটা।
অমন
একটা অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করে নাচটাকে নিজের কেরিয়ার হিসেবে নিতেই পারতেন।
কিন্তু নেন নি। ছিলেন অ্যানালগ ফটোগ্রাফি ও ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট-এ বিশেষ পারদর্শী।
সেটাকেও কেরিয়ারের অঙ্গ করেন নি। ছাত্র জীবন থেকে চাকরী জীবনে এমন এমন অনুষ্ঠানের
আয়োজকের ভূমিকায় ছিলেন যেখানে অংশগ্রহন করে গেছেন তৎকালীন স্বনামধন্য শিল্পীরা।
তাঁর নাটক-ফুটবল তো সেই কবেই অতীত হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি ছিলেন তার লক্ষ্যে অবিচল।
অসাধারণ নয়, সাধারণ হয়ে নিশ্চিত জীবনে বেঁচে থাকার লক্ষ্য। প্রৌঢ় বয়সে শিখেছেন
কম্পিউটার। নিজে শিখে এসে বাড়িতে বসে শিখিয়েছিলেন তাঁর ছেলেদের। সাংস্কৃতিক পাঠ
থেকে জীবন সংগ্রামের সহজ পাঠ, সবটাই তাঁর ছেলেরা শিখেছে তাঁদের বাবার থেকে। চাকরীর
শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন স্কুলের গ্রন্থাগারিক নিয়োগে তিনি ছিলেন ‘অভিজ্ঞ’ পদে। বিনা
সাম্মানিকে সামলেছেন মুক্ত বিদ্যালয়ের কনভেনর এবং কারিগরী শিক্ষার দায়িত্ব। বিভিন্ন
নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার থেকে পোলিং অফিসার, মন্দ-ভালোয় মেশানো অভিজ্ঞতা তাঁর।
চাকরী জীবনের শেষ নির্বাচন ডিউটি? বড্ড তিক্ত অভিজ্ঞতা।
চাকরী
থেকে অবসরের পর চলে গেছেন সব কিছুর অন্তরালে। নিজের ছন্দে জীবন যাপন তাঁর। যে
জীবনে একদা ছিল নির্ভরতার অভাব, সেই জীবনই শিখিয়েছে জীবন সংগ্রামের পাঠ।
নিজের
বাবা নয়, দাদাকে ‘ফাদার ফিগার’ করে বড় হওয়া ছবির ওই ছেলেটা, যে আজও জীবনের সহজ
পাঠটা সুন্দর করে শেখায় সে আর কেউ নয়, আমার বাবা।
হ্যাপি
ফাদার্স ডে, বাবা ।
©প্রীতম পাল
জুন ১৮, ২০২৩
#fathersday #happyfathersday #fathersdaybengali
#আমারবাবা #একবাবারকথা #myfather #mydad
‘মায়ের মত’ ভালো অনেকেই হয়। কিন্তু ‘মা’ তো ‘মা’-ই হয়
জানো মা, পুরোনো অফিসের এক সহকর্মী
এক সময়ে বলেছিল, ‘বাড়ির মা যদি বসে যায়,
সেই সংসার ভেসে যায়’। কথাটা সেদিন হাড়েহাড়ে বুঝেছিলাম যেদিন সকালে তুমি বিছানা
ছেড়ে আর উঠতে পারলে না। কপালে হাত দিয়ে
দেখলাম ছ্যাঁকছ্যাঁক করছে, অক্সিমিটারের ডিজিট দু’টো নব্বই-এর ওপরে আর উঠছে না। বুঝলাম মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে তুমিও গা ভাসিয়েছ।
ডাক্তার নেই, টেস্ট করাবার সুযোগ কমে যাচ্ছে, চারিদিকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের হাহাকার,
আশে পাশের লোকজনের অসময়ে চলে যাওয়া, মৃত্যু মিছিল...... ঊফফ! সে কি দিন গেছে মা গো। আমরাও কি তবে আক্রান্ত? আমি, বাবা কিংবা ভাই,
আমাদের কারোরই সেই ভাবনার অবকাশ ছিল না। শুধু এটুকু জানতাম ঠিক সময়ে ঠিকঠাক জিনিস
গুলো জোগাড় করতে হবে। খাবার, বাজার, ওষুধ, সিলিন্ডার আর মেডিক্যাল সাপোর্ট। লকডাউনের
মধ্যে এগুলোর জন্য যখন দু’চাকা নিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেরিয়েছি, তখনও
বিছানায় শুয়ে শুয়ে তুমি চিন্তা করেছ সদ্য শেখা কাঁচা হাতের অপটুতা নিয়ে। আসলে তোমরা, মায়েরা এরকমই হও। এখনও জানি রাত
দশটা বেজে গেলে রুটিন মাফিক তোমার ফোনটা আসবেই। ফোনের ওপার থেকে তুমি একটা কথাই
জিজ্ঞেস করবে, ‘কোথায় আছিস’?
সবাই বলে আমি নাকি একটু
বেশী পরিবার কেন্দ্রিক। সেসব বোঝাতে ইংরাজিতে ‘ফিলিয়া’, ‘অ্যাডিক্সন’ জুড়ে কীসব
টার্মস ব্যবহার করে। সেই কোন ছোট্ট বেলায় শীতের
ছুটিতে হাত ধরে কলকাতা ঘোরাতে, বাসে যেতে যেতে বলতে, ‘ওই দেখ ওটা ভিক্টোরিয়া, ওটা
বিড়লা তারামন্ডল......’। কখনও পরেশনাথ, কখনও নিউমার্কেট, কখনও অ্যাকাডেমি। আসলে
তুমি যত না চিনিয়েছ, তার থেকে বেশী ভালোবাসতে শিখিয়েছ এই শহরটাকে। তাইতো এই শহরটাও
আজ জেনে গেছে আমার প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় সব কিছু। ঠিক তোমার মত।
পুরোনো অফিসের চাকরিটা যখন ছাড়ছিলাম, তখন একবারের জন্যও জিজ্ঞেস কর নি যে কেন
ছাড়ছি। তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। কথায়
কথায় এখন মাঝেমাঝেই যখন ঐ অফিসের বন্ধুদের খবর জিজ্ঞেস কর, তখন দিব্যি বুঝতে পারি,
তুমি সব জানো। তোমাকে বলতে হয় নি কিছুই। জানো মা, ফটোগ্রাফি কলেজের একটা আড্ডায় ম্যা’ম-ও এই কথাটাই
বলেছিলেন, ‘মায়েরা সব বোঝে’। উঠতি বয়সে তখন কথাটার মানে বুঝি নি, আজ বুঝি।
ছোটবেলায় হাত ধরে নিয়ে যেতে পাশের
কালচারাল অডিটোরিয়ামে, কখনও বা সব পেয়েছির আসরে। কখনও কালচারাল কম্পিটিশনে। আমাদের
মধ্যবিত্ত সংসারের সাংস্কৃতিক চর্চায় বাবা ছিল মেন্টর আর তুমি ছিলে সেই বহমান
স্রোতের কান্ডারী। বইয়ের তাকে প্রাইজ গুলো দেখলে সেই স্মৃতি গুলো আজও জ্বলজ্বল
করে।
আমাদের নিয়ে সবকিছুতেই ছিল তোমার ভাবনাতীত আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। চাপা প্রতিযোগীতা।
মফস্বলে বসে শহরের সঙ্গে। তালে তাল মেলাতে হাবে-ভাবে-নিঃশব্দে বলে গেছ, ‘পারতেই
হবে, তোকে পারতেই হবে’। একটা সময়ে এসে হেরে গেছি। তোমাকেও হারিয়ে দিয়েছি ঐ
প্রতিযোগীতায়। বিশ্বাস কর মা, নিজে হারিয়ে যাওয়ার থেকে ওই হেরে যাওয়াটা বড্ড জরুরী
ছিল। প্রতিযোগীতাটা না থাকলে আজ জীবন হয়ত আরও অন্যরকম হত। জানি সেই প্রতিযোগীতার
আগুনে আজও মাঝে মাঝে ধুনো পড়ে...... কিন্তু আমি তো ডোন্ট কেয়ার।
আজ ‘মাদার্স ডে’ তে তোমার সঙ্গে কোনও
মাখো-মাখো গদগদ ছবি আর আপ্লোড করলাম না। লেবুর দাম যেভাবে ওঠা নামা করছে তাতে
লেবু-লঙ্কায় খরচার পর গরচাও যেতে পারে কিছু।
তোমার জন্য বরং এই লেখাটাই রইল।
আসলে কি জানতো ‘মায়ের মত’ ভালো অনেকেই হয়। তাঁরা আবার একলা পথ হাঁটার কারনও হয়। কিন্তু ‘মা’ তো ‘মা’-ই হয়। কোনও এক জ্বরের রাতে স্নিগ্ধ কোলে, শান্ত-শীতল হাতের ছোঁয়া, একশোটা রাগের কারন আর হাজারটা অভিমানের আশ্রয়।
© Pritam Pal
08.05.2022
#mothersday #mothersday2022 #pritampal
উৎসব যাপন
প্রতিবারের মত এবারেও পৃথুদের গ্রামের দুর্গা মন্ডপে পুজো হল। ঢাক বাজল। মাইকে গানও বাজল। তবু অন্য বারের মত নয়। এবার যেন একটু ম্যাড়ম্যাড়ে, একটু জৌলুস হীন।
পৃথুদের গ্রাম পেরোলেই ধান মাঠ আর মাঠ পেরোলেই উঁচু উঁচু ইমারতের ঠোকাঠুকি। ওই ধান মাঠের দিগন্ত
রেখায় সাদা কাশফুল গুলো এখনও তাদের মাথা দোলাচ্ছে আর পাশের ইট-কংক্রিটের জঙ্গলে যে হাসপাতাল ক’টা ছিল তাঁদের
ব্যাস্ততাও পুজোর আগে খানিকটা কমে গেলেও ইদানীং নাকি আবার বেড়েছে । পৃথুদের বাগানে এবারও
শিউলি ফুটেছে। নীল আকাশে প্যাঁজা তুলোর মত মেঘের চরাচর, তবু পুজো পুজো গন্ধটাই
যেন ছিল না ওদের গ্রামের মানুষগুলোর মধ্যে ।
ওদের গ্রামের মানুষ গুলো সবাই কেমন ঈর্ষা কাতর। একটা পুকুরের ঘাট, একটা রাস্তা, একটা ফুলের গাছ, একটা
ছোট্ট জায়গা নিয়ে পায়ে পা ঠেকিয়ে ঝগড়া করে ওরা। প্রতিবেশীর আনন্দে দুখী
হয় আর তাঁদের বিপদে ছাদ থেকে ছাদে চর্চা করে। কেউ পাশে দাঁড়ায় না
কারও।
ঠিক যেমনটা দাঁড়ায় নি মাস পাঁচেক আগে যখন কোভিড তাঁর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাসিয়ে
নিয়ে যাচ্ছিল গোটা দেশটাকে। সন্ধ্যের পর পৃথু যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরত তখন পাড়ার
রাস্তা থেকে শুধু সারমেয় চিৎকার ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেত না সে। শুনশান, থমথমে চারপাশ। বাড়ি ঢুকে শুনত আজ অমুক বাড়ির
লোক কোভিড পজিটিভ তো কাল তমুকের বাড়ির লোক হাসপাতালে ভর্তি। এভাবেই একদিন অনাহুত
অতিথি এলেন পৃথুদের দ্বারে। পৃথুর মা কোভিড আক্রান্ত হলেন। একদিকে কাছের মানুষের
মৃত্যু ভয় অন্য দিকে পারিপার্শ্বিকের চোখ রাঙ্গানি। পৃথু জানত এ লড়াই তাঁর
একার, তাঁর পরিবারের একান্ত ব্যাক্তিগত।
পৃথু যখন ব্যাক্তিগত পরিচিতিতে অক্সিজেনের
সিলিন্ডারটা জোগাড় করে বাড়ি ফিরছিল তখন ঠাওর করেছিল প্রতিবেশীদের স্বভাবগত কানাকানি, ফিসফিসানিটা অব্যাহতই আছে। যেন পৃথুদের একঘরে
করার উদ্যোগ। কিন্তু ওই যে বলে ‘ধর্মের কল’! তিন দিনও কাটল না। ঐ উদ্যোগীদের ঘরেই সংক্রমণ।
খবরের কাগজে পড়া বা টিভির পর্দায় শোনা ‘গোষ্ঠী সংক্রমণ’ শব্দটার আসল ছবি নিজের চোখে দেখতে পেল
পৃথু। পাশের বাড়ির দাদার নাকি অক্সিজেনের মাত্রা ৭০-এর নীচে নেমে গেছে। স্থানীয়
নেতাকে ধরে দাদাকে পাঠানো হল হাসপাতালে। বিনা চিকিতসায় পরলোকে পাড়ি দিলেন পাশের
বাড়ির জ্যাঠু। কোভিড-এর লক্ষন সারা শরীরে। কিন্তু বাড়ির লোক জানেনই না কী করনীয়।
ঈর্ষাকাতর পাড়ায় সুবুদ্ধি দেবারও যে কেউ নেই। হাসপাতালের দিকে পা বাড়াল পৃথুর
ছোটবেলার বন্ধু গোগোল, দুদিন বাদে ওঁর বাবা। পৃথুদের পাড়ায় তখন ঘরে ঘরে সংক্রমণ। চলে গেলেন ব্যানার্জীবাড়ির বড় কর্তা, ঘোষ বাড়ির নিমাই দাদু।
হাসপাতাল থেকে যেন ফিরতেই চাইছেন না কেউ। পাশের গলির মিহির বাবু মাস ছ’য়েক হল
দিল্লীতে আছেন মেয়ে চন্দ্রানীর কাছে। চন্দ্রানী খবর দিয়েছে, মিহির বাবুও আর নেই।
এই সব খবর শুনতে শুনতে ক্রমশঃ দেওয়ালে পিঠটা ঠেকে যাচ্ছিল পৃথুর। তবু মাকে
বাঁচাতেই হবে। যে কোনো মূল্যে। যদিও ভ্যাক্সিনের দু’টো ডোজই নেওয়া ছিল পৃথুর
মায়ের, ক্রমশ উন্নতি হচ্ছিল শরীরের। তবুও যেন মন মানতে চায় না। কোভিড পরবর্তী শঙ্কাও গ্রাস করছিল তাকে। এমনই একদিন পাশের ঐ দাদার বাড়ির আরেক সদস্য
পৃথুকে জিজ্ঞেস করল “মা কেমন আছেন?”। পৃথু তো অবাক। দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে ঘুরে
দাঁড়াতে হয়, আর ঘুরে দাঁড়াতে গেলে একজোট হতে হয়, এটা সে জানে। এ কী তারই সূচনা? হিসাব মেলাতে সেদিন খুব অসুবিধা
হচ্ছিল পৃথুর। ঠিক তার পরদিনই মায়ের খানিকটা শারিরীক উন্নতি আর বাজারে অক্সিজেন
সিলিন্ডারের বিপুল চাহিদার জন্য সিলিন্ডারটা সে যখন ফেরত দিতে যাবে, শুনতে পেল পাশের বাড়ির ঐ দাদার স্ত্রী আর ওনার মেয়ের কান্না
জড়ানো চিল চিৎকার। হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছিল, দাদার হার্টের নাকি পঁচাশি শতাংশ
ব্লক। ঘন্টা দুয়েক পরেই ঐ দাদার মৃত্যুসংবাদটা ছড়িয়ে গেল পাড়ায়। দোতলার বারান্দা
থেকে পৃথু দেখল শেষ বারের মত দাদাকে দেখতে যাচ্ছে ওঁর বাড়ির লোক। পেছনে পড়ে রইল
দাদার সাধের আম গাছটা। গ্রীষ্মের দুপুরে টপাটপ আম পড়ছে রাস্তার ওপর। শুনশান রাস্তায় তবু
কুড়োবার লোক নেই। দাদার পর পৃথুর ছোটবেলার বন্ধু গোগোলের বাবা। কাকুও কেমন যেন হঠাতই নেই হয়ে গেলেন। কিন্তু শেষ ধাক্কাটার জন্য প্রস্তুত ছিল না পৃথু।
খবর এসেছে, গোগোল-ও আর বাড়ি ফিরবে না। পৃথুর অন্ধ বিশ্বাস ছিল গোগোল ফিরবেই। মাত্র
ছাব্বিশ বছর বয়স ওঁর। লড়াই করে নিজের
পায়ে দাঁড়িয়েছিল। এই লড়াইটাও ও জিতবে। কিন্তু পারল কই? সেদিন নিজেকে আর ধরে রাখতে
পারে নি পৃথু। মায়ের কোলে মাথা গুঁজে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠেছিল ছেলেটা। শুধু একটাই
ভয় ওকে গ্রাস করছিল, বরাদ্দ অক্সিজেন টুকুও কী শেষ হয়ে যাচ্ছে এবার? ওঁদের দিনও কি
ফুরোচ্ছে তবে? দিন পনেরো বোধ হয় সন্ধ্যার
শাঁখ বাজে নি ওদের গ্রামে। তারপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে সবাই। তবু
শোক ওদের ছায়াসঙ্গী। হতে পারে সে প্রিয়
জন বা প্রিয় বন্ধু। সর্বোপরী প্রিয় প্রতিবেশী। হোক না একটু কুচুটে, একটু ঈর্ষা
কাতর, একটু ঝগড়ুটে।
এবার
পুজোয় ওদের ছেড়ে আনন্দ করতে কতটা কষ্ট হয়েছে গ্রামের মানুষগুলোর তা পৃথু জানে না। তবু
বচ্ছরকার পুজো হয়েছে, ঢাক বেজেছে, গান বেজেছে, ভোগ বিতরণ হয়েছে। সবটাই অনাড়ম্বরে।
তবু পুজো কমিটি যদি চাঁদার টাকায় একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার উদ্যোগ নিত.........
। শিয়রে নাকি তৃতীয় ঢেউ। পৃথুও ঠিক করেছে পুজো হোক বা দীপাবলি, সাধের বাহারী আলো
গুলো আর এবছর আর জ্বালবে না সে। আঁধারেই থাক ওঁর এবছরের উৎসব যাপন।
©প্রীতম পাল
১৫ অক্টোবর, ২০২১
শৈশবের ফেলুদা, কৈশোরের ক্ষিদ্দা আর যৌবনের বিশ্বনাথ মজুমদার
৩০ জানুয়ারী, ২০০৫
মফঃস্বলের একটা স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। স্কুলের টিচার্স রুমে বসে আছেন তিনি। নির্ধারিত সময়ে স্কুলের সামনের লনটা দিয়ে হেঁটে আসবেন মঞ্চের দিকে। টিচার্স রুমের চার-চৌহদ্দিতে তখন সাধারনের প্রবেশ নিষেধ। ক্লাস সিক্সের একটা ছেলে কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে অপেক্ষা করছে সেই মুহুর্তটার জন্য যখন তিনি এ পথে আসবেন! বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না তাকে, সেই মুহুর্তটা ঠিক এসে গেল। পাশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর কিছু স্বেচ্ছা সেবকের বেষ্টনিতে তিনি এগিয়ে চলেছেন মঞ্চের দিকে। কালো ব্লেজার গায়ে গট গট করে হেঁটে আসছেন বছর সত্তরের ফর্সা, সুঠাম, মধ্যমণি সেই ‘যুবক’। ছেলেটা আর তাঁর বন্ধুরা মিলে ছুটতে ছুটতে ব্যারিকেড ভেঙ্গে তাঁর সামনে উপস্থিত।
“স্যার, একটা
অটোগ্রাফ”
শুধু মাথাটা
দু’দিকে নাড়ালেন তিনি। ব্যাস!
এক ঝটকায়
ভলেন্টিয়াররা সরিয়ে দিল ওই ছেলের দল কে। স্টেজ থেকে নেমেও সেই একই আব্দারের মুখোমুখি।
এবারেও না।
অটোগ্রাফটা আর
পাওয়া হল না ছেলেটার।
কাট টু
দৃশ্য ২
৩০ জুন, ২০১৩
ছেলেটা এখন কলেজে পড়ে। বাংলার এক প্রথম সারির পত্রিকায় চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার সুযোগ পেয়েছে সে। আজ তাঁর প্রথম আউটডোর অ্যাসাইন্মেন্ট। একটা বাংলা ছবির ‘প্রেস মিট’। ছবির নাম ‘রূপকথা নয়’। নায়কের ভূমিকায় তিনি।
তারপর অনেক
ওঠাপড়া। বছর চারেক পর সাংবাদিকতার ‘মোহ’ ছেড়ে আরেকটা সংস্থার দশটা-সাতটার
প্রযুক্তিবিদ হয়ে গেল ছেলেটা। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স চিত্র সম্পাদক। একটা ডিজিটাল
সংগ্রহশালার প্রোগ্রাম ডেভেলপিং হেড।
কাট টু
দৃশ্য ৩
১২ জানুয়ারী,
২০২০
সাতদিন বাদেই তিনি পঁচাশিতে পা রাখবেন। ডিজিটাল সংগ্রহশালার উদ্যোগে তাঁকে অডিও চিঠি পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। সম্পাদকের ভূমিকায় সেই ছেলেটি।
কাট টু
দৃশ্য ৪
২৪ ফেব্রুয়ারি,
২০২০
শহর থেকে ১৮ কিমি দূরে ছেলেটার অফিস এখন। সেই ডিজিটাল সংগ্রহশালা আরেক প্রবাদপ্রতিম কে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। প্রয়োজন তাঁর একটা ইন্টারভিউ। কিন্তু ইতিমধ্যেই খানিক অসুস্থতা গ্রাস করেছে তাঁকে। টেকনিক্যাল কর্মকর্তা হিসেবে ওই ছেলেটিকেই যেতে হবে। কিন্তু বিধি ছেলেটার দশটা-সাতটার শিডিউল। শহরের বাইরে থেকে ফিরে সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে রাত সাড়ে আটটা। এদিকে ওনার মেয়ে মিতিল দি বলে দিয়েছেন ন’টার মধ্যে তিনি নাকি ঘুমিয়ে পড়েন। অতএব প্রযুক্তিগত ব্যাপার স্যাপার আরেক সহকর্মীকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ছেলেটা। সেবারও আর তাঁর সামনে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল সেট করা হয় নি ছেলেটার।
কাট টু
দৃশ্য ৫
১৫ নভেম্বর,
২০২০
ছেলেটার এডিট টেবিলে তিনি বসে আছেন, কথা বলছেন। অথচ গোটা শহর তাঁর শোকে সন্তপ্ত। ৪০ দিনের লড়াই শেষে আজ তিনি পাড়ি দিয়েছেন পরপারে।
তাঁকে নিয়ে
ছেলেটার স্মৃতি কথা এখানেই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু ছেলেটা জানে মানুষটা বারবার ফিরবে
তার এডিট টেবিলে।
একটা অটোগ্রাফ
থেকে ক্যামেরায় চোখ রেখে তাঁকে শুট করার সুযোগ, এই না পাওয়ার আক্ষেপটা সারা জীবন
থেকে যাবে ছেলেটার মনে। ছেলেটার শৈশবের ফেলুদা, কৈশোরের ক্ষিদ্দা আর যৌবনের
বিশ্বনাথ মজুমদার সে । প্রবাদপ্রতীম শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
বিঃদ্রঃ ছবিটা
‘রূপকথা নয়’-এর প্রেস মিটে তোলা
ঋতু পরিচয়

সে দিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। টুপ টুপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। ৩০ মে, ২০১৩, দিব্যি মনে আছে সেকেন্ড ইয়ার অনার্সের সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা দিয়ে ফিরেছি সবে, ভাই বলল, “দাদা খবর শুনেছ ?”
আমি বললাম, “কী?”
ভাইঃ ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ মারা গেছেন!’
আমি বললাম, সে কী!
আকাশ থেকে পড়লাম। টিভিটা চালাতেই চ্যানেলে চ্যানেলে যেন একটাই খবর।
“প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ”।
কোথাও যেন বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল কেউ যেন মিথ্যে কথা বলছে। এই তো দুদিন আগে টুইট করে বললেন যে ‘সত্যান্বেষী’-র শুটিং শেষ। আর আজ? তবে কী সত্যিই থেমে যাবে রোববারের ‘ফার্ষ্ট পার্সন’-এর কলম? ভিন্ন স্বাদের সম্পর্ক গুলো নিয়ে কী আর কেউ পর্দায় গল্প বলবে না? টিভিতে বলছে, ইন্দ্রানী পার্কের বাড়ি থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে নন্দন চত্বরে, তারপর টেকনিসিয়ান ষ্টুডিও হয়ে শেষ কৃত্য সম্পন্ন হবে সিরিটি শ্মশানে, সেখানেই নাকি তাঁর বাবা-মা মায়ের দেহ বিলীন হয়েছিল। মনে হচ্ছিল বাসে উঠে সোজা শোভাবাজার চলে যাই, তারপর মেট্রোয় রবীন্দ্র সদন। একে সারাদিনের পরীক্ষার ক্লান্তি, তার ওপর টিপটিপে বৃষ্টি। সন্ধ্যা হবু হবু। সাইকেল টা নিয়ে সোজা চলে গেছিলাম বন্ধু তায়নের বাড়ি। ও খবরটা আমার কাছ থেকেই শুনল প্রথম।
আসলে আমাদের দুজনেরই বড্ড প্রিয় ছিল এই মানুষটা। একসঙ্গে বসে দেখলাম তাঁর গান স্যালুট। দুজনেই ভাষাহীন। টিভিতে দেখছি ওনার ভাই (ইন্দ্রনীল ঘোষ) ভেঙ্গে পড়লেন কান্নায়। তায়ন বলল, “এই বন্ধ কর। নেওয়া যাচ্ছে না”। টিভিটা বন্ধ করে সাইকেলটা নিয়ে আবার ফিরে এলাম বাড়িতে। বড্ড মনে পড়ছিল কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের ‘এখন কুইজ’ অনুষ্ঠানের শুটিং-এর কথা। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হয়েছে সবে। একদিন সুযোগ পেলাম কলকাতা দূরদর্শনের ‘এখন কুইজ’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার। শুটিং চলছে। মুক্ত প্রশ্ন। হাত তুললে সুযোগ। চলছে অডিও ভিশুয়্যাল রাউন্ড। একটা সিনেমার পোষ্টার দেখানো হল। জিজ্ঞেস করা হল সিনেমার নাম এবং গীতিকার-এর নাম। ঝপাঝপ হাত উঠল। অত হাতের ভিড়ে আমার হাতটা যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিল। সিনেমার নাম সবাই ঠিক বললেও গীতিকারের নামটা সবাই ভুলই বলছিল। কিন্তু শেষ সুযোগটা এল আমার কাছেই। উত্তর দিলাম নির্ভুল। সিনেমার নাম ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’, গীতিকার ঋতুপর্ণ ঘোষ। কুইজ মাষ্টার এবার ইয়র্কার দিলেন, ‘বলতে পারবেন কোন ভাষায় লেখা হয়েছিল গান গুলি?’ আমিও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বললাম, ‘ব্রজবুলি’ ভাষায়। সঙ্গে সঙ্গে হাততালি। আর মেমেন্টো আমার হাতে। আসলে কী করে ভুলি, মায়ের পাশে বসে নন্দন ২-এ দেখা আমার প্রথম সিনেমা।
তখন ক্লাস সিক্স। প্রতি রবিবার বিকেলে ডিডি বাংলায় বাংলা সিনেমা দেখানো হত। সেখানেই একদিন দেখলাম ‘উনিশে এপ্রিল’। মা বলত, ‘উনিশে এপ্রিল’ নাকি অপর্ণা সেনের সিনেমা। তখন তো আর এত ফিল্ম ম্যাগাজিন ঘাঁটতাম না আর কথায় কথায় গুগল সহায়-ও ছিল না। সেদিন টাইটেল কার্ডে প্রথম দেখেছিলাম ঋতুপর্ণ ঘোষ নামটা। শান্ত, মৃদু চালের একটা সিনেমা শেষ দৃশ্যের পর মনে হল, এ যেন শেষ হয়েও শেষ হল না।

মনের ভেতর দাগ কেটে গেল সে ছবি। তারপর শর্ট টেষ্ট, হাফ ইয়ার্লি, ইউনিট টেষ্ট, অমুক স্যার, তমুক কোচিং, তুসুক ম্যাডাম করে মাধ্যমিকের বাধ্য ছেলে হয়ে কাটিয়েছি বেশ কয়েকটা বছর।
ততদিনে টাক মাথা, নারীসুলভ আচরণে অভ্যস্ত মানুষটাকে টিভির পর্দায় দেখে ফেলেছি বেশ কয়েকবার। ক্লাস ইলেভেন তখন। কো-এডুকেশন। কেমিষ্ট্রি কোচিং-এ বসে চলছে স্কুলের ক্লাস বাংকের প্ল্যানিং। প্ল্যানিং মাষ্টার আরণী। প্ল্যান হল সিনেমা দেখতে যাওয়া হবে। কী সিনেমা? না, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’। গ্রাম মফঃস্বলে যেখানে নুন শো কিংবা ম্যাটিনি শো-এ ‘এম.এল. এ ফাটাকেষ্ট’ কিংবা ‘রিফিউজি’ আর সাতটা কিংবা এগারোটার শো-এ ‘গরম জওয়ানী’র পোষ্টার পড়ে সেখানে তো আর এই সব সিনেমা আসে না তাই গন্তব্য ‘আইনক্স’। শোনা মাত্রই ওই প্ল্যানে জল মিশতে লাগল কয়েক সেকেন্ড। পয়সা খরচা করে ওসব ম্যান্দা মারা আর্ট ফিলিম তারা দেখবে না। আর আমাদের কয়েক জনের তখনও বন্ধু সহযোগে সিনেমা হলের প্রবেশাধিকার মেলে নি। কাজেই প্ল্যান ক্যান্সেল। দিন কুড়ি পরেই এক রাতে টিভির পর্দায় এলো সিনেমা টা। সপরিবারে দেখলাম। এ কেমন সিনেমার ভাষা! আবারও মুগ্ধ হলাম। পরে যেদিন আরণীর সঙ্গে দেখা হল, ওকে বললাম, “সিনেমা টা দেখলাম, কী দারুন রে”। ও এক এক করে বলল, ‘তিতলি’ দেখেছিস? ‘শুভ মহরত’? ‘খেলা’? ‘অন্তরমহল’? ‘দহন’? ওগুলো দেখিস।
‘দহন’ দেখি নি। পড়েছি। তখন খবরের কাগজ গুলো আজকের মত ঘটা করে সিনেমার পাতা বের করত না। আর বের করলেও ভিন্ন ঘরানার ছবি নিয়ে বেশী বাক্য ব্যয় করত না। সেই শুরু সত্যজিৎ-মৃনাল-তপনের পর বাংলায় অন্য ধারার সিনেমার প্রতি আকর্ষণ। যত দেখছি তত সম্মোহিত হচ্ছি। ঋতুপর্ণ ছাড়িয়ে পরিচালকের লিষ্ট ক্রমশ বাড়ছে। তারমধ্যেই ষ্টার জলসায় শুরু হল ‘ঘোষ এন্ড কোম্পানি’। যেন নিজের ড্রয়িং রুমে বসে কেউ আড্ডা দিচ্ছে। সেখানেই একদিন দেখলাম ঋতুপর্ণ ঘোষকে ভীষণ রেগে যেতে। মীর কেন তাঁকে নিয়ে মস্করা করে? একদিন এক আত্মীয়ের বাড়িতে পেলাম ‘ফার্ষ্ট পার্সন’ ম্যাগাজিনটা। অবাক হলাম। এভাবেও পাঠককে প্রানের মায়ায় বেঁধে ‘সম্পাদকীয়’ লেখা যায়! ক্লাস টুয়েল্ভ যখন, রবীন্দ্রনাথের জন্ম সার্ধশতবর্ষে শুরু হল ‘গানের ওপারে’। মেগা সিরিয়ালের সে কী ভিন্ন ভাষা! কত অজানা কে জানার এক মাধ্যম। নিজের কলমে নিজের সিনেমার আত্ম সমালোচনা। বাংলা, বাঙালি আরো কত কী! কিন্তু বিধি টি.আর.পি। হঠাত ঋতু পরিবর্তন। ভাষাও এলোমেলো।

তারপর প্রথম কলেজ কেটে নন্দনে সিনেমা দেখতে যাওয়া। চিত্রাঙ্গদা... দ্য ক্রাউনিং উইশ। এই ছবির রিভিউ লিখেছিলাম দু’বার। তাঁর প্রয়াণের পর। প্রথম রিভিউ এক সংবাদ পত্রে সাংবাদিক পদে ফ্রিল্যান্স করার সুযোগ দিয়েছিল। আর দ্বিতীয় রিভিউ দিয়েছিল পুরস্কার, একটি পোর্টালের তরফে। তাঁর প্রয়াণের পরদিন কলকাতা থেকে প্রকাশিত সবকটা নিউজ পেপার কিনে নিয়েছিলাম, আর্কাইভাল ভ্যালু হিসাবে। পরে পরে ‘আনন্দলোক’, ‘প্রথমা’, ‘ফার্স্ট পার্সন’, ‘রিডিং ঋতুপর্ণ’ সওওওব। জোগাড় করে ফেলেছিলাম ‘সানগ্লাস’ বাদে সবকটা ছবি এমন কী টেলিছবি কিংবা শ্রুতিনাটকেরও ডিজিটাল ভার্সন। পাইনি শুধু ‘দহন’। সেটাও দেখেছিলাম সে বছর ফিল্ম ফেষ্টিভ্যালে, রেক্ট্রোস্পেক্টিভ বিভাগে, শিশির মঞ্চে বসে। কলেজের সেকেন্ড ইয়ার পাশের পেপারের পরীক্ষা দিয়েই ছুটেছিলাম নন্দন-এ। শেষ সিনেমার সাক্ষী থাকতে। ‘সত্যান্বেষী’। ফার্ষ্ট ডে, ফার্ষ্ট শো। আশাহত হয়েছিলাম। যেমন ভালো লাগে নি ‘খেলা’ বা ‘জীবনস্মৃতি’। বছর দেড়েক আগেও তাঁকে নিয়ে তৈরী তথ্যচিত্র ‘সন্ধ্যের পাখি’ দেখতে ছুটেছিলাম নন্দনে। ওই ছবির সম্পাদক আবার আমার সম্পাদনা শিক্ষার এক গুরু।
তাঁর প্রয়াণের পর তাঁর ব্যবহার, যৌনতা বোধ, নেপোটিজম ইত্যাদি অনেকেরই আলোচনার বিষয় বস্তু। কিন্তু তাঁর ছবি, রুচিবোধ, সাহিত্যমনস্কতা বারবার আকৃষ্ট করেছে তাঁকে আরো নতুন করে জানতে। সেই জানা আজও বহমান। তাঁর প্রয়াণের মাত্র দু’মাস পর সাংবাদিক হিসাবে আমার প্রথম আত্মপ্রকাশ। আক্ষেপ একটাই। সাংবাদিক বা চিত্রগ্রাহক জীবনে একবারও সামনা সামনি পেলাম না মানুষটা কে।
আজ একটাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে মানুষটাকে। আজ যেখানে আছেন সেখানে মায়ের হাতের পায়েস আর বাবার অনেক অনেক আদর নিশ্চয়ই মিস করেন না আর ?
সাতান্নতম জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে। ভালো থাকবেন।
প্রীতম পাল
৩১ আগষ্ট, ২০২০
Photo
Courtesy: Suman Dey Sarkar, Pritam Pal, Kolkata Movie Database, Prathama Magazine
বাইশে শ্রাবণ
শুভঃ কীরে সকাল থেকে কোনও ম্যাসেজ নেই! কী ব্যাপার?
শ্রেয়াঃ ওহ! সরি। আসলে আজ প্রোগ্রাম নিয়ে একটু ব্যাস্ত ছিলাম রে... তাই আর......
শুভঃ প্রোগ্রাম? এই লকডাউনের মধ্যে আবার কীসের প্রোগ্রাম?
শ্রেয়াঃ আজকের তারিখটা কী বলতো?
শুভঃ সেভেন্থ আগস্ট। তো?
শ্রেয়াঃ আর?
শুভঃ আর কী? হিরোসিমা ডে সিক্সস্থ অ্যান্ড নাকাসাকি ডে নাইন্থ। সেভেন্থ-এ আবার কী আছে? তোর বার্থ ডে তো ডিসেম্বরে। আঙ্কল-আণ্টির-ও কোনও স্পেস্যাল ডে নেই। তাহলে?
শ্রেয়াঃ আজ বাইশে শ্রাবণ। আচ্ছা বাইশে শ্রাবণ বলতে কী বুঝিস তুই?
শুভঃ কেন প্রসেঞ্জিতের খিস্তিমাত করা ওই সিনেমাটা যেখানে লাস্টে পরমব্রত কীভাবে ছাড়া পেয়েছিল তা নিয়ে জোর চর্চা হয়েছিল এক সময়ে।
শ্রেয়াঃ জানতাম। তোর মত সিনেমার
পোকারা তো এই উত্তরই দেবে। ওরে আজ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু দিন রে।
শুভঃ ও হ্যাঁ ! সিনেমায় একটা সিনে
দেখিয়েছিল তো। বাট বাংলা ডেট আজকের দিনে কে মনে রাখে বলতো?
শ্রেয়াঃ
বাঙালি আর কোনও বাংলা তারিখ মনে রাখুক বা না রাখুক, তিনটে তারিখ কিন্তু মাথায়
রাখে?
শুভঃ কোন তিনটে বলতো?
শ্রেয়াঃ ১ লা বৈশাখ, ২৫ বৈশাখ আর ২২
শ্রাবণ। আচ্ছা ইংলিশ মিডিয়াম বলে কী এগুলো একটু জানতে নেই?
শুভঃ ২২ শ্রাবণ মানে কিন্তু আমি আরো একটা জিনিস জানি।
শ্রেয়াঃ কী বলতো?
শুভঃ জ্ঞানেশ মুখার্জী, মাধবী মুখার্জীর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফিল্ম।
শ্রেয়াঃ
মৃনাল সেন। তাইতো?
শুভঃ ইয়েস।
কলেজে পড়ার সময় ডিভিডি গুলো কিনেছিলাম। এখন চলবে কী না কে জানে?
শ্রেয়াঃ তার মানে এত দিন যে তোকে সত্যজিৎ পাগল ভাবতাম তা
নয় তুই মৃনাল সেন টাও গুলে খেয়েছিস।
শুভঃ হা হা হা। সত্যজিৎ, মৃনাল, ঋত্বিক, তপন, ঋতু সব। বাই দ্য ওয়ে সত্যজিৎ বলতে
মনে পড়ল। সত্যজিৎ রায়ের রবীন্দ্রনাথের ওপর একটা ডকুমেন্টারি ছিল। ওর ফার্স্ট সিন
টাই তো ছিল রবীন্দ্রনাথের ডেডবডি কাঁধে এক ঝাঁক লোক কলকাতার রাস্তায় হেঁটে চলেছে।
বাট ওখানে কিন্তু সত্যজিৎ রায় ‘অন সেভেন্থ আগস্ট ১৯৪১, ইন দ্য সিটি অফ ক্যালকাটা,
আ ম্যান ডায়েড’ বলেছিলেন। বাইশে শ্রাবণ বলেন নি।
শ্রেয়াঃ ঠিক। আজও কিন্তু সেভেন্থ। ক্যালেণ্ডারটা দেখ। আর বাইশে শ্রাবণটা বাংলার
তারিখ শুভ। আচ্ছা ওই এক দল লোক ডেডবডি কাঁধে কোথায় যাচ্ছিল বলতো?
শুভঃ এটা জানি। নিমতলা ঘাট। বছর চারেক আগে কলকাতার একটা পুরোনো স্কুলের ওপর একটা
ডকু ফিচার শুট করেছিলাম। তখন নিমতলা ঘাটে একটা সিকোয়েন্স ছিল। ওখানেই দেখেছিলাম
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি সৌধটা।
শ্রেয়া: জানিস তো এই লক ডাউনে একটা
সিরিয়াল দেখছিলাম ওখানে ২২ শ্রাবণ কী সুন্দর দেখিয়েছে।একটা বাড়ির সবাই রবীন্দ্র
অনুরাগী, আর ঐ বাড়ির হেড অফ দ্য ফ্যামিলির জন্মদিন বাইশে শ্রাবণ। তিনি আবার
রবীন্দ্রনাথের ছাত্র। রবীন্দ্রনাথ ঐ দিনে মারা গেছেন বলে জীবন থেকে জন্মদিনের
আড়ম্বরই তুলে দিয়েছেন উনি।
শুভঃ তুই কী গানের ওপারের কথা বলছিস?
শ্রেয়াঃ এক্স্যাক্টলি। কী অসাধারণ
সিরিয়ালের ভাষা!
শুভঃ লকডাউনে এটা আরেকবার দেখাল।
২০১০-এর সিরিয়াল এটা। তখন ঋতুপর্ণ ঘোষ সিরিয়ালটার স্ক্রিপ্ট লিখতেন। কলকাতার
নামীদামী সাংস্কৃতিক লোকজন সিরিয়ালটা দেখত। তারপর টি.আর.পি নিয়ে কী একটা সমস্যা হল
স্লট পালটে গেল। ঋতুপর্ণ ঘোষ-ও আর লিখলেন না।
শ্রেয়াঃ বাবা! এই খবরও থাকে তোর কাছে?
শুভঃ হুমম! পেপারে বেরিয়েছিল। তখন
আমার সামনে এইচ.এস. পরীক্ষা। টিভির সামনে বসলেই মায়ের বকুনি ছিল অবধারিত। তাও
লুকিয়ে লুকিয়ে রিপিট টেলিকাষ্ট দেখতাম। আর কোনো এপিসোড মিস হলে ডোনা বলে একটা
বান্ধবী ছিল, ও বলে দিত।
শ্রেয়াঃ ডোনা মানে তোর ঐ ডাক্তার
বন্ধু?
শুভঃ হ্যাঁ। ছোট্ট থেকে রবীন্দ্রনৃত্যটাও খুব ভালো নাচত ও। আর এখন তো ও কোভিড
ওয়ারিয়র।
শ্রেয়াঃ সত্যি রে। এই করোনা যে
কতকিছু পাল্টে দিল। ২৫ বৈশাখের মত ২২ শ্রাবণটাও ভার্চুয়ালি করতে হল।
শুভঃ সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ, নরলোকে
বাজে জয়ডঙ্ক। এল মহা জন্মের-ও লগ্ন।
শ্রেয়াঃ সত্যি রে। আজ
পেপারে পড়লাম, ভ্যাক্সিন নাকি আগষ্টেই আসছে। এই দুঃসময় পেরোলে আবার একসঙ্গে বসন্ত
উৎসবে শান্তিনিকেতন যাব, ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্র সদনে প্রোগ্রাম করব, বল?
শুভঃ আর কর্পোরেটের চাপে আমিও
পয়লা বৈশাখ বাদে সবকটা বাংলা ডেট ভুলে যাব।
শ্রেয়াঃ হা হা হা।
শুভঃ চল গুড নাইট। কাল আবার লকডাউন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে হবে।
শ্রেয়াঃ হুম। গুড নাইট রে।
৭ আগষ্ট, ২০২০
-
পথের শেষে একটা ঘর, আর জি কর আর জি কর । শিল্পী অতনু বর্মন-এর থেকে ধার করেই শুরুটা লিখলাম। গতকালই এক দৈনিকের প্রথম পাতার লিড-প্যারায় পড়...
-
ছবিটা সত্তর কিংবা আশির দশকের উত্তর কলকাতার কোনও এক অ্যামেচার থিয়েটার-এর। ছুরি হাতে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে যে ছেলেটি অভিনয় করছে, গলপটা তাঁর। মঞ...
-
জানো মা, পুরোনো অফিসের এক সহকর্মী এক সময়ে বলেছিল, ‘ বাড়ির মা যদি বসে যায় , সেই সংসার ভেসে যায় ’ । কথাটা সেদিন হাড়েহাড়ে বুঝেছিলাম যেদ...