বাইশে শ্রাবণ

বাইশে শ্রাবণ

শুভঃ কীরে সকাল থেকে কোনও ম্যাসেজ নেই! কী ব্যাপার? 

শ্রেয়াঃ ওহ! সরি। আসলে আজ প্রোগ্রাম নিয়ে একটু ব্যাস্ত ছিলাম রে... তাই আর......


শুভঃ প্রোগ্রাম? এই লকডাউনের মধ্যে আবার কীসের প্রোগ্রাম?


শ্রেয়াঃ আজকের তারিখটা কী বলতো?


শুভঃ সেভেন্থ আগস্ট। তো?


শ্রেয়াঃ আর?


শুভঃ আর কী? হিরোসিমা ডে সিক্সস্থ অ্যান্ড নাকাসাকি ডে নাইন্থ। সেভেন্থ-এ আবার কী আছে? তোর
  বার্থ ডে তো ডিসেম্বরে। আঙ্কল-আণ্টির-ও কোনও স্পেস্যাল ডে নেই। তাহলে?

শ্রেয়াঃ  আজ বাইশে শ্রাবণ। আচ্ছা বাইশে শ্রাবণ বলতে কী বুঝিস তুই? 
 


শুভঃ কেন প্রসেঞ্জিতের খিস্তিমাত করা ওই সিনেমাটা যেখানে লাস্টে পরমব্রত কীভাবে ছাড়া পেয়েছিল তা নিয়ে জোর চর্চা হয়েছিল এক সময়ে।

শ্রেয়াঃ জানতাম। তোর মত সিনেমার পোকারা তো এই উত্তরই দেবে। ওরে আজ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু দিন রে।

শুভঃ ও হ্যাঁ ! সিনেমায় একটা সিনে দেখিয়েছিল তো। বাট বাংলা ডেট আজকের দিনে কে মনে রাখে বলতো?

শ্রেয়াঃ বাঙালি আর কোনও বাংলা তারিখ মনে রাখুক বা না রাখুক, তিনটে তারিখ কিন্তু মাথায় রাখে?

শুভঃ কোন তিনটে বলতো?

শ্রেয়াঃ  ১ লা বৈশাখ, ২৫ বৈশাখ আর ২২ শ্রাবণ। আচ্ছা ইংলিশ মিডিয়াম বলে কী এগুলো একটু জানতে নেই?


শুভঃ ২২ শ্রাবণ মানে কিন্তু আমি আরো একটা জিনিস জানি।


শ্রেয়াঃ কী বলতো?

শুভঃ জ্ঞানেশ মুখার্জী, মাধবী মুখার্জীর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফিল্ম।

শ্রেয়াঃ মৃনাল সেন। তাইতো?

শুভঃ ইয়েস। কলেজে পড়ার সময় ডিভিডি গুলো কিনেছিলাম। এখন চলবে কী না কে জানে?
  

শ্রেয়াঃ  তার মানে এত দিন যে তোকে সত্যজিৎ পাগল ভাবতাম তা নয় তুই মৃনাল সেন টাও গুলে খেয়েছিস।


শুভঃ হা হা হা। সত্যজিৎ, মৃনাল, ঋত্বিক, তপন, ঋতু সব। বাই দ্য ওয়ে সত্যজিৎ বলতে মনে পড়ল। সত্যজিৎ রায়ের রবীন্দ্রনাথের ওপর একটা ডকুমেন্টারি ছিল। ওর ফার্স্ট সিন টাই তো ছিল রবীন্দ্রনাথের ডেডবডি কাঁধে এক ঝাঁক লোক কলকাতার রাস্তায় হেঁটে চলেছে। বাট ওখানে কিন্তু সত্যজিৎ রায় ‘অন সেভেন্থ আগস্ট ১৯৪১, ইন দ্য সিটি অফ ক্যালকাটা, আ ম্যান ডায়েড’ বলেছিলেন। বাইশে শ্রাবণ বলেন নি।

শ্রেয়াঃ ঠিক। আজও কিন্তু সেভেন্থ। ক্যালেণ্ডারটা দেখ। আর বাইশে শ্রাবণটা বাংলার তারিখ শুভ। আচ্ছা ওই এক দল লোক ডেডবডি কাঁধে কোথায় যাচ্ছিল বলতো?

শুভঃ এটা জানি। নিমতলা ঘাট। বছর চারেক আগে কলকাতার একটা পুরোনো স্কুলের ওপর একটা ডকু ফিচার শুট করেছিলাম। তখন নিমতলা ঘাটে একটা সিকোয়েন্স ছিল। ওখানেই দেখেছিলাম রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি সৌধটা।


শ্রেয়া: জানিস তো এই লক ডাউনে একটা সিরিয়াল দেখছিলাম ওখানে ২২ শ্রাবণ কী সুন্দর দেখিয়েছে।একটা বাড়ির সবাই রবীন্দ্র অনুরাগী, আর ঐ বাড়ির হেড অফ দ্য ফ্যামিলির জন্মদিন বাইশে শ্রাবণ। তিনি আবার রবীন্দ্রনাথের ছাত্র। রবীন্দ্রনাথ ঐ দিনে মারা গেছেন বলে জীবন থেকে জন্মদিনের আড়ম্বরই তুলে দিয়েছেন উনি।

শুভঃ তুই কী গানের ওপারের কথা বলছিস?


শ্রেয়াঃ এক্স্যাক্টলি। কী অসাধারণ সিরিয়ালের ভাষা!

শুভঃ লকডাউনে এটা আরেকবার দেখাল। ২০১০-এর সিরিয়াল এটা। তখন ঋতুপর্ণ ঘোষ সিরিয়ালটার স্ক্রিপ্ট লিখতেন। কলকাতার নামীদামী সাংস্কৃতিক লোকজন সিরিয়ালটা দেখত। তারপর টি.আর.পি নিয়ে কী একটা সমস্যা হল স্লট পালটে গেল। ঋতুপর্ণ ঘোষ-ও আর লিখলেন না।

 

শ্রেয়াঃ বাবা! এই খবরও থাকে তোর কাছে?


শুভঃ হুমম! পেপারে বেরিয়েছিল। তখন আমার সামনে এইচ.এস. পরীক্ষা। টিভির সামনে বসলেই মায়ের বকুনি ছিল অবধারিত। তাও লুকিয়ে লুকিয়ে রিপিট টেলিকাষ্ট দেখতাম। আর কোনো এপিসোড মিস হলে ডোনা বলে একটা বান্ধবী ছিল, ও বলে দিত।

 

শ্রেয়াঃ ডোনা মানে তোর ঐ ডাক্তার বন্ধু?

শুভঃ হ্যাঁ। ছোট্ট থেকে রবীন্দ্রনৃত্যটাও খুব ভালো নাচত ও। আর এখন তো ও কোভিড ওয়ারিয়র।

 

শ্রেয়াঃ সত্যি রে। এই করোনা যে কতকিছু পাল্টে দিল। ২৫ বৈশাখের মত ২২ শ্রাবণটাও ভার্চুয়ালি করতে হল।

 

শুভঃ সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ, নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক। এল মহা জন্মের-ও লগ্ন।  

শ্রেয়াঃ সত্যি রে। আজ পেপারে পড়লাম, ভ্যাক্সিন নাকি আগষ্টেই আসছে। এই দুঃসময় পেরোলে আবার একসঙ্গে বসন্ত উৎসবে শান্তিনিকেতন যাব, ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্র সদনে প্রোগ্রাম করব, বল?  

শুভঃ আর কর্পোরেটের চাপে আমিও পয়লা বৈশাখ বাদে সবকটা বাংলা ডেট ভুলে যাব।

শ্রেয়াঃ হা হা হা।

শুভঃ চল গুড নাইট। কাল আবার
লকডাউন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে হবে

শ্রেয়াঃ হুম। গুড নাইট রে। 

৭ আগষ্ট, ২০২০ 


No comments:

Post a Comment