“ফুলকলি রে ফুলকলি”

       



A Scene from HOLUD BARIR CHITHI
Cinematography By: Pritam Pal

দিন
চারেক হল নন্দন-৩-এ অনুষ্ঠিত কলকাতার এক স্বনাম ধন্য ফিল্ম ফেষ্টিভ্যালে ‘হলুদ বাড়ির চিঠি’র স্ক্রিনিং হয়ে গেল। অফিস, বাড়ি, প্রোজেক্ট, পোষ্টপ্রোডাক্সন সব কিছুর ব্যাস্ততায় আর যাওয়া হয়ে উঠল না। আগামী ৮ মার্চ আবার সুদূর আমেরিকায় শো। এদেশে বসেই সেদিন হয়ত আমাদের কলাকুশলীদের সক্কলের মন পড়ে থাকবে ‘হলুদ বাড়ি’র স্মৃতির বারান্দায়। এতদিনে সবাই জেনে গেছেন যে ‘হলুদ বাড়ির চিঠি’ আদতে আমাদের হারানো শৈশবকে ফিরে পাবার একটা ছবি। যে শৈশব জুড়ে আছে আমাদের গল্পের মতো ইস্কুল বাড়ি । কিন্তু কৈশোর, যৌবনের স্মৃতির ভারে আমরা অনেকেই ভুলে যাই সেই সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া পেলব মাটিকে, যার ওপর গুটি গুটি পায়ে আমরা শৈশব পার করি।  আট থেকে আশি সকলের জীবনেই গল্পটা বোধ হয় প্রায় এক।


ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল,  এখন যেমন
ছবিঃ তায়ন জয় মাশ্চটক


        ‘হলুদ বাড়ির চিঠি’ ছবিতে খুব সুন্দর একটা ডায়ালগ আছে, “আমার হেঁটে চলার ক্যানভাসে মরা অতীত পাশ ফিরছে, আমায় হাঁটু গেড়ে ডাকছে......”। আজকের বাস্তব জীবনের ব্যস্ততাতেই হোক  কিংবা  ভার্চুয়াল জগতের স্বল্প বার্তালাপ, মরা অতীতের ডাক উপেক্ষা, কার সাধ্যি?   রাজারহাটের বুকে তখনও ইংরাজি মিডিয়াম স্কুলের ছয়লাপ হয় নি। হাফপ্যান্ট কিংবা ফ্রক পড়ে টিনের সুটকেস বা একটা ছোট্ট ব্যাগ কাঁধে ছেলেমেয়েরা ছুটত পাড়ার প্রাইমারি স্কুলে। সেসব প্রাইমারি স্কুল আবার আজকের মত নয়। তার না ছিল ইউনিফর্ম, না ছিল বসার বেঞ্চ। আলো-আঁধারি ঘরে একটা মাত্র নড়বড়ে চেয়ারে বসে শিক্ষক মশাই পড়াচ্ছেন ‘তিন দুগুনে ছয়’, ‘তিন তিনে নয়’, কিংবা ‘অ-এ অজগর আসছে তেড়ে’ বা ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’।  সামনে চাটাই কিংবা মাদুর পেতে বসে এক দল ছাত্রছাত্রী, কেউ পড়া শুনছে কেউ বা আপন মনে দুষ্টুমি করছে বা নিজেদের খেলায় মেতে উঠেছে । কিন্তু নব্বইয়ের দশকের রাজারহাটের মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চাকাঙ্খী, শৃঙ্খলাপরায়ণ,  দূরদর্শী বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করতেন সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া কিছু কিণ্ডারগার্টেন স্কুলে। আমার জীবনেও ছিল এমন একটা কিণ্ডারগার্টেন স্কুল। ছোট ছোট ফুলকলিদের একসঙ্গে ‘সাদা-মেরুন’ পাপড়ি মেলে উজ্জ্বল দিনযাপনের এক আদরের পাঠশালা। যার নাম  ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল। লোয়ার নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি। সাত বছরের প্রাথমিক শিক্ষার জীবন। সকালে হত লোয়ার নার্সারি, আপার নার্সারি আর কেজি-র ক্লাস । দুপুরে বসত প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি ।

        মনে আছে বাবার হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাবার দিনটা। লোয়ার নার্সারিতে পড়ব না, তাই ইন্টারভিউ দিতে হবে। ইন্টারভিউ নিতে বসা দিদিমণি থুড়ি আন্টি-কে আজও মনে আছে। ঝুমা আন্টি। সাধারণ আলাপের পরই একটা সাদা ফুলস্কেপ কাগজ দিয়ে বলেছিলেন ‘এম’ থেকে পরপর লেটার গুলো লেখো তো। লেখা শেষে একটা রাইমস বলতে বললেন। তারপর একটা বাংলা কবিতা। ব্যাস। ঐ স্কুলে ভর্তি হবার জন্য নির্বাচিত হয়ে গেলাম। প্রথম দিনটার কথা এখনো মনে আছে। পরনে সাদা জামা, মেরুন হাফ প্যান্ট, পায়ে কালো জুতো, সাদা মোজা। সেই প্রথম ইউনিফর্ম পরা। সকাল বেলা বাবার হাত ধরে ছোট ছোট পায়ে স্কুলের গেটে পা । কাঁদো- কাঁদো মুখ। এক অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়ে গেলেন ভেতরে। তাঁদের ডাকতাম মাসি বলে। তাঁদের চেহারাই ছিল তাঁদের নাম। সকালে ছিলেন ‘বেঁটে’ মাসি আর ‘মোটা’ মাসি। দুপুরে ‘চশমা’ মাসি আর ‘রোগা’ মাসি। ভেতরে নিয়ে গিয়ে যার পাশে বসালেন সেই হল জীবনের প্রথম বন্ধু। বন্ধু নয় বান্ধবী। তখন তো আর লিঙ্গভেদ বুঝতাম না।  সেই বান্ধবী আজও আমার ভার্চুয়াল জগতের বন্ধু তালিকাভুক্ত, কিন্তু নেই কোনো কথালাপ। তার নামটা না হয় আজ উহ্যই থাক ।

        তারপর আন্টির কথামতো সবাই উঠে দাঁড়াল। হাত জোড় করে প্রার্থনা সঙ্গীত। ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’-র প্রথম স্তবক। মর্নিং সেক্সানের জন্য ওটুকুই বরাদ্দ। ডে সেক্সানের জন্য সম্পূর্ণ গান।  তারপর জাতীয় সঙ্গীত। শুনে শুনে-ই গান মুখস্থ। প্রথম যে আন্টির ক্লাস করেছিলাম তাকেও বেশ মনে আছে। সহেলি আন্টি। সহেলি রায়। প্রথম কয়েকদিন ভ্যাবা-চ্যাকা খাওয়া, বাড়ির জন্য মন কেমন, পেছন বেঞ্চের বন্ধুর ‘মায়ের কাছে যাব’ বলে কেঁদে ওঠা......... তারপর তো এসব ভয়-ভীতিও উধাও। স্কুল যাবার আগে বৃষ্টি হলেই আমাদের মুখ ব্যাজার। সেদিন আর দেখা হবে না কারোর সঙ্গে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বাবা কিংবা মায়ের হাত ধরে বা কোলে চেপে ইটের রাস্তা ধরে সোম থেকে শুক্র কাঠগোলার
রাজারহাট, কাঠগোলা। আগে এখানেই ছিল ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল
ছবিঃ তায়ন জয় মাশ্চটক


মোড়ে স্কুলে যাওয়া। তারপর শনি, রবি ছুটি।  আজ যেখানে নিউ সানবীম কেজি স্কুল, সেখানেই ছিল আমাদের শৈশবের ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল। যার বর্তমান অবস্থান রাজারহাট চৌমাথার কাছে।   প্রিয় বন্ধুর বসার জন্য পাশে রাখা থাকত জায়গা । সেখানে অন্য কেউ বসলেই বেজায় মন খারাপ। আর বেঞ্চের ধারে জায়গা পেলে গোটা বিশ্ব যেন সেদিন হাতের মুঠোয়। ক্লাসের প্রথমেই জমা নেওয়া হত হোম ওয়ার্কের খাতা, তারপর হোম ওয়ার্ক দেওয়া, এরপর ক্লাস ওয়ার্ক। ক্লাস ওয়ার্ক হয়ে গেলেই ছিল আন্টির কড়া শাসন, “সবাই মাথা নীচু কর। সবাই ঘুমিয়ে পড়”। তবু শাসন ভেঙ্গে চলত আমাদের চোখ পিটপিট, ফিসফিস করে কুশল বিনিময়। ক্লাস শেষে আমাদের না ছিল ঘন্টা, না ছিল হই-হুল্লোড়। পরের ক্লাসের জন্য আবার তৈরি হওয়া।

        তিনটে পিরিয়ড ফুরোলেই টিফিন। একটা মগে জল নিয়ে মাসি আসতেন সবার হাত ধুইয়ে দিতে। বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া সুন্দর টিফিন বাক্সে মুড়ে ডিম-পাউরুটি, লুচি-তরকারি নাহলে হাল আমলের ম্যাগি-চাউমিন। নাকে মুখে কোনও রকমে টিফিন গুঁজেই সামনের ছোট্ট মাঠে ধরাধরি, চোরপুলিস, লুকোচুরি, তালাচাবি, কুমির-ডাঙ্গা নয়ত মেলা-মেলা খেলা। আউটডোর গেমস ভালো না লাগলে ক্লাসের বেঞ্চে বসে ‘বুক ক্রিকেট’, নাহলে ‘পেন ফাইটিং’। আর ছুটির সময় গেটের বাইরে বেরিয়েই মৌরি লজেন্স, হজমি গুলি নাহলে ক্যাডবেরি লজেন্স কিংবা বিস্কুটের জন্য মা-বাবার কাছে বায়না। স্কুলের ওই ছোট্ট  মাঠেই ছিল একটা মাঝারি মাপের জামরুল গাছ। গ্রীষ্মের দিনে গাছতলায় পড়ে থাকা জামরুলও কুড়োত অনেকে। সেই গাছ তলায় চেয়ার টেবিল পেতে মাইনে নিতেন এক আন্টি। নামটা মনে নেই। তবে মনে আছে একবার ২৩ জানুয়ারির সকালে অনুষ্ঠান হয়েছিল ওই মাঠে। তারপর জায়গার অভাবে সেই মাঠেই মাথা তুলে দাঁড়াল আরেকটা ক্লাসরুম। নিহত হল সেই জামরুল গাছ। ঐ নতুন ঘরেই জানালার সামনে চেয়ার টেবিল নিয়ে অফিসিয়াল কাজকর্ম করতেন অপর্ণা আন্টি। ডে-সেক্সানে থ্রি-র ক্লাস হত ওখানে।

        তারপর থেকেই আমাদের আক্ষেপ ছিল যে আমাদের স্কুলের একটা খেলার মাঠ নেই। ক্লাসেই আমাদের খেলতে হয়। কিন্তু শীতকাল এলেই আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। জানুয়ারীর মাঝামাঝি লাইন দিয়ে নিয়ে যাওয়া হত সামনের একটা ছোট্ট মাঠে। অ্যানোয়াল স্পোর্টসের ট্রায়াল। সেই মাঠ যদিও আর নেই বর্তমানে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় সেখানে মাথা তুলেছে নতুন ইমারত।  দিন দশেক মাঠে ছুটোছুটির পর কালীবাড়ির মাঠে ফাইনাল স্পোর্টস। স্পোর্টস-এর শেষে ‘যেমন খুশি সাজো’। তারপর-ই আসত সরস্বতী পুজো। পুজোর আগের দিন তাড়াতাড়ি ছুটি। পুজোর দিন সেজে গুজে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়া আর প্যাকেট হাতে বাড়ি ফেরা। আর সবশেষে অ্যানোয়াল পরীক্ষা। টেনসন নেই, বুক ধুকপুকানি নেই। পরীক্ষা হত আনন্দের সঙ্গে। মর্নিং সেক্সানে খাতায় প্রশ্ন লেখা থাকত। ক্লাস ওয়ান থেকে দেওয়া হত প্রশ্নপত্র। দিন পনেরো-কুড়ি পরেই রেজাল্ট। তারপর আবার নতুন ক্লাস। নতুন বই, নতুন খাতা। স্কুলের নাম লেখা খাতা পাওয়া যেত স্কুল থেকেই।  মে মাসের দুই বা তিন। ক্লাস শুরুর দিনটা যেন বাঁধা হয়ে গেছিল।

       
নতুন ক্লাসে ওঠার কয়েক দিন পরেই শুরু হত অ্যানোয়াল ফাংশানের প্রস্তুতি। যার সূচীতে রবীন্দ্র-নজরুল ছাড়া অন্য কারোর প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। মহড়ায় আবৃত্তির ভার সামলাতেন অপর্ণা আন্টি, নাচে দোলা আন্টি আর গানে উম্পা আন্টি। উম্পা আন্টি সারা বছর আমাদের গানের ক্লাস-ও নিতেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত, ছড়ার গান, দেশাত্মবোধক, নজরুল গীতি...... সপ্তাহের সেই একটা ক্লাস-ই বোধ হয় আজকের সাংস্কৃতিক চর্চার আঁতুড় ঘর ছিল। মনে আছে ক্লাস ওয়ানে জীবনের প্রথম আবৃত্তি পরিবেশন, স্কুলের অনুষ্ঠানে। রাজারহাটের প্রথম ম্যারেজ হল ‘মাল্যদান’-এ। তখন ক্লাস টু, আজকের বন্ধ হয়ে যাওয়া গীতশ্রী সিনেমা হল-এ জীবনের প্রথম বার ষ্টেজে ওঠা, ঐ স্কুলের অনুষ্ঠানেই। অনুষ্ঠান শেষে থাকত সেই বছরের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, তারপর প্রায় এক মাসের গ্রীষ্মাবকাশ। আরেকটা ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত পুজোর ছুটির আগে। সেদিন-ও আমাদের ইউনিফর্মে ছিল মানা, রঙ্গিন সাজে সেজে ‘অ-মাইক’ অনুষ্ঠানে মেতে উঠতাম আমরা।  ষাণ্মাসিক পরীক্ষার পর থাকত এক সপ্তাহের শীতের ছুটি। ছুটি ফুরোলেই বন্ধু কিংবা আন্টিকে নতুন বছরের গ্রিটিংস কার্ড দেওয়া।

        আর স্কুলের সবকিছুই যার নখদর্পনে ছিল তিনি আমাদের সকলের পরম পিতা। ওই স্কুলের এক ও অদ্বিতীয় স্যার। সব আন্টির দাদা। কুমারেশ প্রামানিক। ক্লাস ফোরের প্রায় সব ক্লাসই তিনি নিতেন।

        বছরে তিনবার পরীক্ষা, অ্যানোয়াল ফাংসান, হই-হুল্লোড়ে কেটেছিল কমবেশি ছ’টা বছর।  তারপর হাইস্কুলের অ্যাডমিশন টেস্ট। ওই স্কুল থেকে চিরতরে বিদায়। এরপরও পেরোয় অনেকগুলো বসন্ত। শৈশব থেকে কৈশোর পেরিয়ে যুবক বয়সে এসে ফিরে তাকাই ফেলে আসা সেই দিনগুলোর দিকে। নিবেদিতা আন্টি, দীপা আন্টি, ববিতা আন্টি, সোমা আন্টি, মানবী আন্টি, কাকলি আন্টি, রুমা আন্টি, জয়তী আন্টি, মল্লিকা আন্টি, সোনালি আন্টি, মোনালিসা আন্টি...... আচ্ছা তোমাদের হাতে গড়া সেই ক্ষুদে গুলোকে কি আজ তোমরা চিনতে পারো? বিশ্বাস কর পুজোর ভিড়ে কিংবা মেলার মাঠে আজও তোমাদের চিনতে একটুও ভুল হয় না। বছর সাতেক আগে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে শুনেছিলাম লিপি আন্টির খবরটা। কত আর বয়স ছিল?

       
আমাদেরও তো কত কত বন্ধু ছিল। শুভেন্দু, হাসান, জেবা, কার্ত্তিক, গনেশ, এলিসা, ইসরাত, গোপা, রনি এরকম আরো কত নামের সঙ্গে ছোটবেলার ওই চেহারাটাই মনে থেকে গেছে, কোনোদিনই আর দেখা হয় নি যাদের সঙ্গে। অনেকেই আবার ভার্চুয়াল জগতে বন্ধুতালিকা ভুক্ত, কিন্তু নেই কোনও বার্তালাপ। কেউ তো আবার এই পৃথিবীর-ই মায়া কাটিয়ে অন্য জগতে পা রেখেছে।  আবার অনেকেই ছোটবেলার সেই বন্ধুত্বকে আজও আঁকড়ে ধরে রেখেছে। 

        সত্যি বলছি আলমারির কোনে রাখা  ছোট হয়ে যাওয়া ওই সাদা জামা আর মেরুন প্যান্টটা আরেকবার পরতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে তোদের পাশে বসে আরেকবার ‘অক্সফোর্ড মডার্ণ ইংলিশ’ বইটা খুলি, কিশলয়ের পাতাগুলো ওলটাই। ফিরে যাই কাঠগোলার ঐ স্কুল বাড়িটাতে যেখানে আমাদের ফুলকলির মত একটা জীবন ছিল, যে জীবনের স্বাদ ছিল।

প্রীতম পাল
৬ মার্চ, ২০২০

(বিঃদ্রঃ – লেখক ২০০৩ সালের ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুলের প্রাক্তনী)      

No comments:

Post a Comment