![]() |
Photo Courtesy: Pijush Shil |
রবিবার, জুন সংক্রান্তির পড়ন্ত বিকেল । কল্পনা দি, মানে অভিনেত্রী কল্পনা বড়ুয়ার আমন্ত্রনে
গেছিলাম ডোভার লেনের এল্ডোরাডো গেষ্ট হাউসে। উপলক্ষ্য ওনার নাটকের
দল অর্থাৎ ‘কল্পনা’-র এক
বছর পূর্তি উৎসব। নাম ‘এন্ড
এটসেট্রা ’। পৌছে দেখি সে যেন অনাড়ম্বরতার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গতার
আহ্বান। উৎসব তো নয়, যেন
অন্তরাত্মাকে খোঁজার ডাক। মঞ্চ নেই, মাইক্রোফোনের গমগমানি কিংবা রঙ্গিন আলোর ঝকঝকানি নেই, উদবোধনী
সঙ্গীত, সরস্বতী বন্দনা এমন কী সভাপতি নির্বাচন-ও নেই। আছেন জনা ষাটেক দর্শক আর আছে
এক চিলতে অনুষ্ঠানের জায়গা। কিন্তু ও কে? দরজা
পেরিয়ে এসে যে বলছে “এসো, গর্তে এসো।” । তার আহবানেই সাড়া
দিয়ে দর্শকাসন থেকে একজন একজন করে এগিয়ে
যাচ্ছেন অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে আর শোনাচ্ছেন তাঁদের যন্ত্রনার কথা? যন্ত্রনা ওদের শরীরে। ওদের শারীরিক যন্ত্রনাটাই আবার কিছু
মানুষের মানসিক যন্ত্রনা। কারন ওরা কেউ হিমোফিলিক, কেউ বা হিমোফিলিক রোগীর
বাবা-মা। যখন তখন রক্তক্ষরনের ভয় কে জয় করে আপন মাঝে শক্তি ধরেছে ওরা। সকল
বিহ্বলতাকে জয় করে আজ
ওরা স্বতন্ত্র। নাটকের মাধ্যমে
এঁদের নিয়েই প্রথম অন্তরঙ্গতা । তারপর তিন গুনীজন কে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন। এমন তিন জন যাদের থিয়েটার যাপন উদবুদ্ধ করেছে কল্পনা দি দের। সত্যরঞ্জন বেহেরা, নিরঞ্জন ভুঁইয়া এবং চপল ভাদুড়ী। হ্যাঁ, সেই চপল ভাদুড়ি, যাঁর জীবন নিয়ে নির্মান
হয়েছিল ২০১০ সালের সমালোচিত সিনেমা ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’। সেদিনের অনুষ্ঠানে তিনি
যে শুধু সম্বর্ধনা গ্রহন করলেন তা নয়, যা
পেলেন, বিনিময়ে দিলেন অনেক কিছু। মাইকেল মধুসূদন
দত্তের মা, জাহ্নবী দেবীর চরিত্রাভিনয়। ওফ! এই
বয়সেও সে কী প্রানবন্ত ! স্বচক্ষে ওনার অভিনয় দেখার সুযোগ পেলাম
সেদিন। এই চরিত্রায়ন দেখেই মহানায়ক উত্তমকুমার
নাকী তাঁর ভূয়সী প্রশংসা
করেছিলেন। এর পরই ছিল অরিজিত রায়ের কলম ও নির্দেশনায় কল্পনা
বড়ুয়ার একাকী অভিনয়ের নাট্য উপস্থাপনা ‘নাম কী রে তোর?’
বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের জাঁতাকলে আটকে, নিয়মানুবর্তিতার
স্রোতে ভেসে নিজেকে হারিয়ে ফেলা এক নারীর আত্মকথন। যার প্রতিটা ক্ষুরধার সংলাপের অনুরণন থেকে যায় নাটক শেষের পরেও। আর এই রেশ থাকতে
থাকতেই ‘শব্দরথী’-র প্রযোজনায় সাদাত হোসেন মান্টোর কাহিনী অবলম্বনে ‘তোবা টেক সিং’। রুপায়নে
অরিজিত রায়। দেশ ভাগের প্রেক্ষিতে লেখা
গল্পের এক অনবদ্য নাট্যরূপ। তোবা টেক সিং-এর অন্বেষণে থাকা এক উন্মাদের হিন্দুস্থান আর পাকিস্তানের মাঝখানে নো ম্যান্স্ ল্যান্ড-এ হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ার আগে অরিজিত রায়ের উদাত্ত কন্ঠের সেই বিখ্যাত সংলাপ কানে বাজে বারবার। ‘উপর দি গুড় গুড় দি অ্যানেক্স দি মুঙ্গ দি ডাল অব দি হিন্দুস্থান অউর পাকিস্তান...’।
ধন্যবাদ কল্পনা দি, অরিজিত দা, এমন সুন্দর এক সন্ধ্যা উপহার দেবার জন্য। ‘কল্পনা’ যাত্রা আরো সুগম হোক, এগিয়ে চলুক ‘শব্দরথী’-র রথ-ও।
প্রীতম পাল
১৬ জুলাই, ২০১৯
![]() |
Picture Courtesy: KALPANA Facebook page |
![]() |
TOBA TEK SING Picture Courtesy: Pijush Shil |
ধন্যবাদ কল্পনা দি, অরিজিত দা, এমন সুন্দর এক সন্ধ্যা উপহার দেবার জন্য। ‘কল্পনা’ যাত্রা আরো সুগম হোক, এগিয়ে চলুক ‘শব্দরথী’-র রথ-ও।
প্রীতম পাল
১৬ জুলাই, ২০১৯
![]() |
With CHAPAL BHADURI Picture Courtesy: Pijush Shil |
No comments:
Post a Comment