আহত! রক্তাক্ত ! আক্রান্ত ! আতঙ্ক ! বিশ্বাস করুন শব্দগুলো আমার মনে
আস্তে আস্তে চিরস্থায়ী আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনের চারপাশের ঘটনার বিবরণ শোনার
জন্য নিউজপেপার পড়তে,
নিউজ চ্যানেল দেখতে সত্যি গ্লানি বোধ হয়। একটা অদ্ভুত সময়ে বাস
করছি আমরা। এন.এর.এস.-এর ডাক্তারদের নিয়ে চারদিকে নানান কথা, নানান খবর। সবটাই ঐ ‘হলদে’ সাংবাদিকদের বয়ানে। তারমধ্যেও কিছু কিছু অবিকৃত ফুটেজ আসছে সোস্য়াল মিডিয়া মারফত। হ্যাঁ, সারা বাংলা ব্যাপী সমস্ত ডাক্তার সম্প্রদায় যে ধর্মঘট-এর ডাক দিয়েছেন,
তাকে পূর্ণ সমর্থন করি। সত্যিই তো কর্মক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তাই
না থাকে তাহলে কিসের সেবা? কিসের কাজ? সরকার আপনাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান।
কিন্তু সরকারী ও বেসরকারী ডাক্তারবাবুরা, সরকার সব দাবী
মেনে নিলে বা আশ্বস্ত করলে দয়া করে একটু মানবিক হোন।একটু, জাষ্ট একটু মানবিক হোন। ২০১২ সাল থেকে কখনো নিজের জন্য কখনো পরিবারের
আত্মীয়কে নিয়ে পিজি, আর. জি. কর, মেডিকা, আর.এন. টেগর, বালানন্দ ব্রম্ভচারী, বি.পি. পোদ্দার, আনন্দলোক, ইত্যাদি নানান হাসপাতালে ঘুরেছি।
বিশ্বাস করুন, অপ্রিয় হলেও সত্যি যে আপনাদের ব্যবহার অনেক
ক্ষেত্রেই অমানবিক। আপনারা ‘আক্রান্ত’ হয়েছেন, আন্দোলন করেছেন, বেশ করেছেন।সমস্যা মিটে গেলে শুধু মানবিকতার আলোটা একটু জ্বালান।
সরকারী হাসপাতালের আউটডোরে বসে প্রাইভেট পেশেন্ট পার্টির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে
ফোনালাপ, প্রাইভেট ডিসপেনসারির বিজ্ঞাপন, সস্তার আউটডোরের থেকে পার্সোনাল চেম্বারে বেশী সময় দেওয়া, এগুলোর সাক্ষী কিন্তু আমি নিজে। নিঃসন্দেহে আপনারা ভালো ছাত্র, ডাক্তারী পড়ার সুযোগ সবাই পায় না আর সেই সুযোগটাই ছিনিয়ে নিয়ে অনেক
কষ্ট করেই আপনারা ডাক্তার হন, কিন্তু তাই বলে ‘মূর্খ’ ভারতবাসীর মাথাটাও কিন্তু আপনারা কিনে
নেন না। আমার মত সাধারন আম-আদমীর মুখে আপনাদের সম্পর্কে এই কথাগুলোই কিন্তু
ঘুরেফিরে বেরাচ্ছে। আপনাদের প্রতিবাদ স্বরূপ আপনারা সরকারী হাসপাতালে ইস্তফা পত্র
জমা দিচ্ছেন। বুকে হাত রেখে
বলুন তো এর প্রতিবাদে আপনি বিনে পয়সায় প্রাইভেটে কটা রোগী দেখলেন?
হাসি পাচ্ছে ! তাই না? ভাবছেন পাগলের
প্রলাপ। কান পাতুন ডাক্তারবাবু। প্রয়োজনে কানে ষ্টেথোস্কোপ লাগিয়ে শোনার চেষ্টা
করুন। আম-আদমী কিন্তু এ'কথা গুলোই বলছে।
এবার বলি কর্তৃপক্ষকে।
এন.এর.এস.-এর এই তুলকালাম ঘটনার পর মনে করার চেষ্টা করছিলাম পশ্চিমবঙ্গের
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নাম কী?
বিশ্বাস করুন ইতিহাস ঘেঁটে মনে করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আচ্ছা
আপনাদের হাসপাতাল (সরকারী/বেসরকারী) গুলোতে প্রতিদিন যে পরিমান জনসমাগম হয় তাঁর
ম্যানেজমেন্টের জন্য যথাযোগ্য লোক থাকে? আচ্ছা হাসপাতালের
চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের এক্স্যাক্টলি কত টাকা মাইনে দেন বলুন তো যে পরিষেবা
দেওয়ার পরেই তারা পেশেন্ট পার্টির কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চান। লজ্জা! এটা আপনাদের
সিস্টেমের লজ্জা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ট্রেন্ড নার্স না নিয়ে ‘আয়া’ গোছের কর্মী নিয়ে কাজ করিয়ে পয়সা বাঁচিয়ে
আদতে কার মুখে চুনকালি লেপছেন আপনারা? আর হাসপাতালের
পরিবেশ, শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে না হয় মুখে কুলুপ আঁটলাম। শুনেছি সরকারী হাসপাতালের তৃতীয় বা
চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি পেতেও নাকি আপনাদের মোটা অঙ্কে খুশি করতে হয়। আর ‘দলিল-দস্তাবেজ’ হীন ঐ ‘খুশির মুনাফা’ তুলতেই নাকি ওদের এত ঢিলেমি।
একেক জনের তো আবার এমন ভাব যে, আমরা সরকারী কর্মী,
যখন ইচ্ছে হবে কাজ করব। কেন? মহামান্য
কর্তৃপক্ষ কেন?পরিবর্তন তো চেয়েছিলেন। এই সিস্টেমের
পরিবর্তন হয় না কেন? আর পান থেকে চুন খসলেই আপনাদের এই ‘ঘৃন্য’ সিস্টেমের বলি হয় ‘ইন্টার্ন ডাক্তাররা’!
আর আমাদের পাড়ার দাদা-বৌদি, ভাই-বোন-দিদি,
কাকা-জ্যাঠা, জ্যাঠি-কাকি, যারা বাসের ভিড়ে, ট্রেনের কামরায়, কিংবা চায়ের ঠেকে এই বিষয়টা নিয়ে আসর গরম করছেন তাদের বলি, প্লিজ, আপনারা আপনাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে
মন দিন। কর্মক্ষেত্রের প্রথম দিনগুলোর কথা মনে করুন তো? সবটাই
কী নির্ভুল ছিল? আপনার কাজের একটা ছোট্ট ভুল কী আপনার
সংস্থার বিন্দু মাত্র ক্ষতি করে নি? আজ একজন রোগীমৃত্যুর
জেরে একটা হাসপাতালের একজন ডাক্তার গুরুতর আহত হয়েছেন সেখানে গোটা বাংলার
ডাক্তারমহল প্রতিবাদ জানিয়েছে, পরিষেবা বন্ধ রাখার মত
সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন, দাবি শুধু একটু নিরাপত্তার। তা
গোটা বাংলার ‘আসর জমানো পাবলিক’-রা
আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনি সুরক্ষিত তো? আপনি আক্রান্ত হলে
ঠিক কত জন প্রতিবাদী হতে পারবে? আপনার পাশের টেবিল?
আপনার গোটা অফিস? যে সেক্টরে কাজ করেন
গোটা বাংলার সেই সেক্টর? খোঁজ নিন। কারন দিন কাল মোটেই
ভালো না। ডাক্তার যেমন স্বাস্থ্য পরিষেবা দেন তেমন আপনিও সরকারী বা বেসরকারী
ক্ষেত্রে কোনো না কোনো পরিষেবা দিচ্ছেন। ডাক্তাররা প্রতিবাদে নামতে পেরেছেন। আপনি
বা আপনারা পারবেন তো?
আর ডা. পরিবহ মুখোপাধ্যায়। আপনার
সঙ্গে যে নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি পাক। আর আপনিও দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন, অনেক বড় ডাক্তার হয়ে উঠুন। আর এই
বাংলায় না হলে..................
প্রীতম পাল
১৩ জুন, ২০১৯
No comments:
Post a Comment