“কইতে কী চাই, কইতে কথা বাঁধে”





        ডিনার সেরে নিজের ষ্টাডিতে এসে বসল পৃথু। ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে এগারোটা ছুঁই ছুঁই। আর মাত্র আধঘন্টা। এরপরই অফিসিয়ালি জীবনের রজত জয়ন্তী বর্ষে পদার্পন করবে সে। জন্মদিন উপলক্ষে কোথায় ভেবেছিল কাল ছুটি নেবে, তা আর হল কই? ছুটিটা আজই নিতে হয়েছিল পৃথু কে। কারন দিন পনেরো আগে ওদের কলেজের অনিমেষ স্যার  ফোটোগ্রাফি কোর্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন-ক্ষন জানিয়েছিলেন। দিনটা ছিল আজই। কলেজের তরফ থেকে ফোন পাওয়ার পর থেকেই বেশ উত্তেজিত ছিল ও। দুই... আড়াই বছর। হ্যাঁ প্রায় আড়াই বছর তো হবেই। আড়াই বছর পর আবার সবার সঙ্গে দেখা হবে। সেই পুরোনো গন্ধটা আবার কিছুক্ষনের জন্য গায়ে মাখা যাবে। ফোটোগ্রাফিকে পৃথু তার পেশা হিসাবে নেয় নি, বরং ওঁর নেশা গুলোর মধ্যে একটা ছিল ফোটোগ্রাফি। ফোটোগ্রাফির ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম পাঁচজনের মধ্যে র‍্যাঙ্ক-ও করেছিল।
        গতকাল রাতেই অনিমেষ স্যার ওঁকে ফোন করে বলেছিল, ‘ইউনিভার্সিটির ভিসি তোদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেবেন, ষ্টুডেন্টদের তরফ থেকে তুই কিছু বক্তব্য রাখিস’। পৃথু-ও রাজি হয়ে যায়। আসলে পৃথু আজ ওঁর ব্যাক্তি জীবনে বা কর্মজীবনে যতটুকু সফলতা পেয়েছে সেখানে এই ফোটোগ্রাফি কোর্সটার অবদান তো কম ছিল না। নাই বা হল ও ফুলটাইম ফোটোগ্রাফার, সিনেম্যাটোগ্রাফার বা ডিরেক্টর। মনের কোনে সাজিয়ে নিয়েছিল ওঁর বলার উপকরণ গুলোকে। বাড়ির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খানিক প্র্যাক্টিশ করেছিল। পরিকল্পনা মাফিক আজ অনুষ্ঠান মঞ্চে ডাকও পরেছিল পৃথুর। কতদিন এভাবে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ায় নি সে, মাইক্রোফোন হাতে নিয়েও কথা বলে নি। স্পিকিং কিউবিকল-এ দাঁড়িয়ে গলাটা যেন কেঁপে উঠল তার। অডিয়েন্সের কালো মাথাগুলো দেখে ভেবলে গেল সে। গলার ভেতর দলা পাকিয়ে গেল কথা গুলো, কত কি বলার ছিল, কত কি বলতে চেয়েছিল, বলতে পারল না। দু-চার কথায় শেষ করল ওঁর বক্তব্য।
অনিমেষ স্যার-ও ওঁকে বলল, ‘তুই যে এত বাজে বক্তব্য রাখিস, জানতাম না’। অথচ এই পৃথুই ইলিনা ম্যাডামের ‘পিস টু ক্যামেরা’ ক্লাসে বাজিমাত করত। স্কুল কলেজের  অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার জন্য কর্ডলেস মাইক্রোফোন হাতে পৃথুরই ডাক পরত সবার আগে।
        আসলে কী বলতে চেয়েছিল পৃথু? ওঁর সফলতার কাহিনী? ওঁর উন্নতির গল্প? মাত্র পঁচিশ বছরের জীবনে কতটাই বা সফল ও? তবুও আজ একটু হলেও সফলতা তো পেয়েছে ও। তার জন্য লড়াইটাও কম করতে হয় নি। আর ও জানত যে উন্নতির শিখরে পৌঁছতে গেলে লড়াই জিইয়ে রাখতে হয়। আজও তাই রেখেছে ও । কিন্তু পৃথু বুকে হাত রেখে বলতে পারে এই লড়াইটা যদি ওকে কেউ শিখিয়ে থাকে সেটা ওঁর ফোটোগ্রাফি কলেজ।
        পৃথুর পেশা এক আর নেশা আরেক। পেশায় পৃথু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আর নেশায় স্বাধীন চিত্রপরিচালক, সম্পাদক ও লেখক। কাজেই চারটি ক্ষেত্রই পৃথুর অবাধ চারণভূমি। এজন্য অনেকের ঈর্ষার পাত্রও সে।
কিন্তু আজকের অনুষ্টানে যে কথা গুলো ওঁর না বলা থেকে গেছে, সেগুলোই আরেকবার স্মৃতিচারন করার চেষ্টা করল সে। আরেকবার উঠে গিয়ে দাঁড়াল ঘরের আয়নাটার সামনে।

        আসলে পৃথুর জীবনে লড়াইয়ের গল্পটা যদি বুনতেই হয় তাহলে ওঁর ফোটোগ্রাফি কলেজের পাশাপাশি আরো কিছু ঘটনা, কিছু মানুষকে স্মরণ করতেই হয়।  পৃথুদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের উন্নতির মানদণ্ড হয় তাদের পড়াশোনা। আর পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিল পৃথু কিন্তু মুখস্থ বিদ্যায় ছিল বড্ড কাঁচা। মাধ্যমিকে স্কুলের মধ্যে প্রথম ছ’জনের মধ্যে র‍্যাংক করা পৃথু সায়েন্স নিয়েই পড়েছিল এবং ঊচ্চমাধ্যমিকেও ফার্ষ্ট ডিভিশনে পাস করেছিল। তবে উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের দিন থেকেই ওঁর জীবনের লড়াইয়ের খানিকটা অংশ শুরু হয়ে গেছিল। পৃথুর বাবা ছিলেন সরকারী কর্মচারী। তাঁর একার উপার্জনে চলত ওদের চারজনের সংসার। বাবা বলেছিলেন, “জয়েন্ট এন্ট্রাসে বা জেক্সপো-তে সরকারী কলেজ না পেলে পড়াতে পারব না”। উচ্চমাধ্যমিকের পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্টের প্রিপারেশনটা পৃথু নিতে পারে নি, তখন একমাত্র আশার আলো ছিল জেক্সপো। কিন্তু তার কাউন্সেলিং-এর আগেই কলেজের ভর্তি শেষ।
        তখনই গ্রামের চৌহদ্দি পেরিয়ে শহরের পথে পা রাখা তার। কলেজে ভর্তির আড়াই-প্যাঁচ তার জানা নেই। কলকাতার কলেজ গুলোর সামনে লম্বা লাইনে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে ফর্ম তুলছে, ফর্ম জমা দিচ্ছে, তারমধ্যেই কোনো কলেজের সামনে দাদাগিরি, বাইপাসে ভর্তির আমন্ত্রন । ঠিক সেই সময়েই ওদের লোকাল কলেজটায় পৃথুর প্রথম পা রাখা। দুটো সাবজেক্টের জন্য অ্যাপ্লাই করল সে। ইংলিশ অনার্স আর কম্পিউটার সাইন্স অনার্স। এবং অদ্ভূত ভাবে কলকাতার অন্যান্য কলেজের থেকে সবার আগে লিষ্ট বের করল এই লোকাল কলেজ এবং ভর্তির ডেট-ও দিল সবার আগে। লিষ্টে জলজল করছে পৃথুর নাম। কিন্তু সে পড়ল ফ্যাসাদে। ওদিকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কাউন্সেলিং-এর ডেট দেয় নি। এদিকে গ্রাজুয়েশনে ভর্তির ডেট। তখন শুভ্রা ম্যাডাম ছিলেন লোকাল কলেজের টিচার-ইন-চার্জ। ওনার সঙ্গে কথা বলল পৃথু, উনিই পরামর্শ দিলেন যে ‘ইংলিশ অনার্সে ভর্তি হও, তারপর যদি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ না যাও তাহলে একটা অ্যাপ্লিকেশন করে ষ্ট্রিম চেঞ্জ করে নিও, কারন খরচের একটা ব্যাপার আছে’। একরাশ অন্ধকারের মাঝে টিমটিমে আলো দেখতে পেল পৃথু। অ্যাডমিশন নিল ইংলিশ অনার্সে। তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মনের মতন স্ট্রিমও পেল না সে। অগত্যা লোকাল কলেজেই আবেদন করে বিষয় বদলাল সে। তখন তার চোখে আর এক নতুন স্বপ্ন। স্নাতকের পর রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর বি.টেক। তবে কলকাতার কলেজ গুলোর থেকে ওদের লোকাল কলেজে পড়াশোনার খরচ অনেক কম ছিল।
        কলেজের প্রথম দিনটার এখনও মনে আছে পৃথুর। সকাল থেকে বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। কলেজের সামনে এক গোড়ালি জল, তার ওপর বেঞ্চ পাতা। যেন কোনো সেতু পার করে মহাবিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে পৌঁছতে হবে।  সেই বেঞ্চের ওপর দিয়েই প্রথম কলেজে প্রবেশ। তারপর কম্পিউটার সায়েন্স ল্যাব। শিক্ষক মহাশয়ের সঙ্গে আলাপের পর তার তরফ থেকে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, ‘কার কাছে পড়িস?’
পৃথুঃ এখনো কারোর কাছে পড়ি না।
স্যারঃ দেখ আমি পড়াই। পড়লে ভর্তি হয়ে যা।
        পৃথু তো অবাক। আস্তে আস্তে পাস কোর্স,  অনার্সের সব শিক্ষক, অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হল। পৃথু বুঝল এটা এমন একটা কলেজ যেখানে ইউনিয়নের হম্বিতম্বি নেই, উটকো ঝামেলা নেই, ক্লাস বাংক নেই, ক্যান্টিনের আড্ডা নেই। আছে শুধু যাওয়া, আসা আর স্রোতে ভাসা। স্রোতে ভাসতে গিয়েই পৃথু টের পেল যে ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স, কম্পিউটার আর্কিটেকচার কিংবা অ্যালগোরিদমের ক্লাস যতটা ভালো লাগছে ততটাই আগ্রহ হারাচ্ছিল ডেটা ষ্ট্রাকচার কিংবা সি প্রোগ্রামিঙ্গের ক্লাস। কারন না বুঝে নোটস মুখস্থ করার বান্দা পৃথু নয়। আর ডেটা ষ্ট্রাকচার কিংবা সি প্রোগ্রামিঙ্গের ক্লাসে পড়া বোঝার থেকে নোটস এর খাতা ভর্তি হত বেশি। কী ভাগ্য পৃথুর! ডেটা ষ্ট্রাকচার-এর ক্লাস নেওয়া এই শিক্ষক মহাশয়ই কলেজের প্রথমদিনে পৃথুকে তাঁর ‘টোল’-এ আমন্ত্রন জানিয়েছিল। ভাগ্যিস সেদিন বুদ্ধি করে তাঁর আমন্ত্রনে সাড়া দেয় নি সে।    

        পৃথু সবচেয়ে বেশী অবাক হল ফার্ষ্ট ইয়ারের পরীক্ষা দিতে গিয়ে। সিলেবাস ধরে, দশ বছরের প্রশ্নোত্তর সলভ করে সে যা যা পড়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র প্রশ্নপত্রে নেই। নিজস্ব জ্ঞানগম্যির ওপর ভরসা করে কোনো রকমে পরীক্ষাটা দিয়ে বেরিয়েই কলেজের দেবেশ স্যার কে ফোন। ‘স্যার এই কোয়েশ্চেনগুলো কোথা থেকে’? স্যার বললেন, “আউট অফ সিলেবাস”। সে বছর কোনো রকমে পাস করে গেছিল পৃথু। কিন্তু দিব্যি বুঝতে পেরেছিল যে নম্বরটা সে পেয়েছে সেখানে তার রাজাবাজারের স্বপ্নটা অধরাই থেকে যাবে সঙ্গে দ্বিতীয় বছরে অনার্স টেকানো আরো কঠিন হয়ে যাবে। আর হলও সেটা। সেকেণ্ড ইয়ারে অনার্স গেল কেটে। সেকেন্ড ইয়ারে পাশের ফিজিক্স প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিতে গিয়ে আরেক নতুন অভিজ্ঞতা, পাস করার জন্য ডিপার্টমেণ্ট কে খুসি করতে হয়। ১০০, ২০০ যেমন খুশি। সেই অনুযায়ী নম্বর-ও। মন চায়নি, তবু হাতখরচ আর গাড়িভাড়ার টাকা থেকে বাঁচিয়ে ঐ টাকা দিয়েছিল সে। আচ্ছা আজকের দিনে এটাকেই কী ‘কাটমানি’ বলে? নিজের ওপর নিজের রাগ হত পৃথুর। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার মত অবস্থা তখন তার। ভবিষ্যৎ কী হবে কিচ্ছুটি জানে না সে।  

        এমন সময়েই এক সন্ধ্যায় ওরা ছোটোবেলার কয়েকজন বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিল, সেই আড্ডার এক বন্ধু ছিল মিডিয়া সাইন্সের ছাত্র। সেইসময়ের মোটামুটি নামী মাঝারি মানের একটা সংবাদপত্রে ইন্টার্ণ করত সে। সে পৃথুকে বলল, ফিল্ম রিভিউ লেখার জন্য ফ্রিল্যান্সার লাগবে। করবি? ছোট থেকেই সিনেমা- সংস্কৃতির দিকে ঝোঁক ছিল পৃথুর। বাবার হাত ধরে ছোটবেলায় কত থিয়েটার দেখেছে, বাবার কাছে আবৃত্তি শিখেছে, মায়ের হাত ধরে নন্দনে বসে প্রথম সিনেমা দেখেছে। রাজি হয়ে গেল সে। কিন্তু ইন্টারভিউ দিতে গেল চুপি চুপি । যাতে বাড়ির কাকপক্ষীও টের না পায়। কারন পৃথুর বাবা তার যৌবন কাটিয়েছিলেন উত্তর-পূর্ব কলকাতায়। তখনকার উত্তর কলকাতার গ্রুপ থিয়েটারগুলির অন্ধ ভক্ত ছিলেন তিনি আর নিজেও নাটক করতেন। ওই পাড়াতেই ছিল নক্ষত্রদের হাট।  কেউ নামী সাহিত্যিক, কেউ প্রখ্যাত রেডিও শিল্পী, কেউ স্বনামধন্য ফোটোগ্রাফার। একদিন পৃথুর বাবা ঐ প্রখ্যাত রেডিও শিল্পীর কাছে তাদের নাটক নিয়ে ইনপুট চাইতে গেছিলেন। কথায় কথায় শিল্পী তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘কী কর?’ পৃথুর বাবা বলেছিলেন, ‘তেমন কিছু না। নাটক করি, লিখি।‘
শিল্পীঃ বাড়িতে কে কে আছেন?
পৃথুর বাবাঃ দাদা, বৌদি আর মা।
শিল্পীঃ আর্নিং মেম্বার?


পৃথুর বাবাঃ দাদা।
শিল্পীঃ ভাই, নাটক করা মানে জানো? ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।
সত্যিই তো। নাটক করে শখ মিটত, বাহবা জুটত কিন্তু দিনের শেষে দাদা-বৌদি’র সংসারে ফিরে আত্ম-সম্মানে কোথাও যেন বাধত। শিল্পীর ঐ সামান্য কথাটুকুই পৃথুর বাবার জীবন বদলে দিয়েছিল। স্কুলের বড় অনুষ্ঠানের নাটকে চান্স পেয়েছিল পৃথু। ৪ মাস ধরে ক্লাস না করে নাটকের রিহ্যার্সাল করতে হবে। বাবা বারন করেছিলেন। তখনই এই কথাগুলো ওর বাবা ওকে বলেছিলেন। এরপর ক্লাস নাইনে আবার স্কুলের নাটকে ভিলেনের রোল করেছিল পৃথু। নাটক শেষে কথা হয়েছিল বড় কোনো নাটকের দলের সঙ্গে যোগাযোগ করার। বাবার বক্ত্যব্য ছিল পড়াশোনার ক্ষতি করে নয়। সত্যিই তো সামনে মাধ্যমিক, পড়াশোনার ক্ষতি তো হতই।
        মাঝারি ঐ সংবাদপত্রের ইন্টারভিউ তে ফ্রিল্যান্স করার সুযোগ টা পেয়ে পৃথু পেয়ে গেল। শুধু ফিল্ম সমালোচনা নয় ফিল্ম সাংবাদিকতাটাও করতে হবে। রাজি হয়ে গেল। প্রথম অ্যাসাইন্মেন্টেই একটা সিনেমার প্রেস কনফারেন্স। পৃথুর রেকর্ডারের ওপারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ফিরে এসে রিপোর্ট লিখল পৃথু। প্রথম লেখা পছন্দ হল না বিভাগীয় সাবএডিটর-এর। তিনি বোঝালেন কীভাবে লিখতে হয়, শেখালেন যে গদ্য সাহিত্যে ‘সাথে’ হয় না ‘সঙ্গে’ হয়। সাংবাদিকতার সেই প্রথম ক্লাসের পর আর ক্লাস নিতে হয়নি তাঁকে। আর বাড়ির লোক পৃথুর সাংবাদিকতার কথা জানল লেখা প্রকাশ হবার পর।   ৯ আগষ্ট, টিভির জন্মদিনেই খবরের কাগজের পাতায় পৃথুর প্রথম লেখা বেরোয়। এরপর টলিউড, বলিউড, রিভিউ, ইন্টার্ভিউ সব অ্যাসাইন্মেণ্ট উতরে দিয়েছে পৃথু। সাম্মানিক ছিল লেখা প্রতি ৫০টাকা, আর ছবি প্রতি ৪০টাকা। যার ৭৫% খরচ হয়ে যেত গাড়ি ভাড়ায়। 
        অ্যাসাইন্মেন্ট করতে গিয়ে নানান পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলের, নানান বয়সের সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা হত, কথা হত পৃথুর। পৃথু ভালোই বুঝতে পারছিল যে পোড় খাওয়া হোক বা নবাগত, আর্থিক দিক থেকে ছোট কিংবা মাঝারি প্রতিষ্ঠানের সবার গল্পই মোটামুটি এক। পৃথুর মত ৪০ টাকা, ৫০ টাকা হয়ত নয় কিন্তু বলার মতনও তেমন নয়। আর পৃথু এবং পৃথুর বয়সী আরো অনেকেই এমন একটা সময়ে এই জগতে পা রেখেছে যখন শুরু হয়েছে নানান চিটফান্ডের দরুন নিউজ পেপার স্ক্যাম। আজ এই পেপার বন্ধ তো কাল ঐ চ্যানেল। কেউ ৬ মাস কেউ ৮ মাস তাদের মাইনে পায় নি। অথচ তাদের প্রতিভা কম
য়। কেউ ভালো রিপোর্ট লেখে তো কেউ ভালো অ্যাংকর আবার কেউ ভালো এডিটর।  পৃথুদের মতন তরুণ তুর্কিদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারনা তৈরি ছিল যে এ.বি.পি. কিংবা বেনেট কোলম্যান এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে জীবন জিঙ্গা লালা। কিন্তু সে ভুল ভাঙলো যেদিন আনন্দবাজারেও নক্ষত্রপতন ঘটল । পৃথুদের পেপারের বিনোদন বিভাগে একটা সুবিধা ছিল যে ওরা প্রান খুলে কলমের জোড়ে সিনেমার কাটাছেড়া করতে পারত। আবার সাবএডিটরের সঙ্গে বসে নানান সিনেমা নিয়ে আলোচনাও করত। আর সেখান থেকেই সুযোগ এল কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেষ্টিভ্যাল কভার করার। ফেষ্টিভ্যাল চত্বরে যত না পৃথু যত না কভার করল, সিনেমা দেখল তার থেকে বেশি। আর দেখা সিনেমাগুলোই ওঁর  ফুটে উঠল ওঁর লেখায়। বেশ কিছু সাধুবাদ-ও কুড়োল সেবার। ওই ফিল্ম ফেষ্টিভ্যলেই পৃথুর সাবএডিটরের একটা শর্টফিল্ম দেখানো হয়েছিল। সিনেমা টা ওঁর ভালো লাগেনি। মুখের ওপর বলে দিয়েছিল। এডিটর সাহেব বলেছিলেন, ‘এই বিষয়ে বসতে চাই’। বসাও হল। পৃথু বলল তার  ভালো না লাগার কারনগুলো।  প্রত্যেকটা পয়েন্ট মাথা পেতে মেনে নিলেন এডিটর মশাই। সেদিনই পৃথু বলেছিল ‘আমার কয়েকটা স্ক্রিপ্ট আছে, দেখবেন? উনি বলেছিলেন, দেখিও। পরদিনই একটা দেখাল সে। দেখে বললেন, ‘ঠিক আছে কিন্তু এক্সিকিউসনে চাপ আছে। সোজা ভাবে কিছু ভাব’। আরেকটা স্ক্রিপ্ট দেখাল সে। পৃথুর স্কুলের বেঞ্চে বসে আনাড়ি হাতে লেখা স্ক্রিপ্ট।  পড়লেন। বললেন স্ক্রিপ্ট টা এমন ভাবে লেখ যাতে খুব কম খরচে বানানো যায়। আবার ভাবতে বসলা পৃথু। আবার লিখল, দেখাল। আর ঐ দেখানো  স্ক্রিপ্টটাই পৃথুর পরিচালনায় প্রথম শর্ট ফিল্ম। কিছু জানা, কিছু অজানা কে সঙ্গী করে বানানো ছবি। ওই এডিটর সাহেবই প্রোডিউসার। প্রোডিউসার মানে  মানুষের মনে বদ্ধ ধারনা চালু আছে, যে প্রচুর টাকা থাকতে হবে, কিন্তু প্রোডিউসার হিসাবে উনি শেখালেন হাও টু প্রোডিউস এ ফিল্ম। পৃথুকে প্রথম ফিল্মএডিট করার অনুপ্রেরনাও দিলেন তিনি। পৃথুর কম্পিউটার সাইন্স পড়ার কম্পিউটার বদলাতে লাগল এডিটের কম্পিউটারে।
        এক শীতের সকালে দাদুর মৃত্যু সংবাদ পেয়েও এয়ারপোর্টের কাছে একটা হোটেলে এক বলিউডি ছবির প্রেস মিট অ্যাটেন্ড করেছিল পৃথু। মাঝারি মাপের ঐ সংবাদপত্রে পৃথুদের সাম্মানিক কম ছিল ঠিকই কিন্তু যা ছিল তা হল আত্মীয়তা। ওরা শিখিয়েছিল দায়িত্ববোধ কাকে বলে, কিভাবে প্রতিদিনের পাতা রেডি করতে হয়, কীভাবে প্রুফ দেখতে হয়, কীভাবে ফাইনাল পেজ ছাড়তে হয়।   
        ঐ দৈনিকের এক বহুদিনের কর্মী একদিন টিফিন খেতে খেতে বললেন ‘দেখো পৃথু জীবনে বড় হতে গেলে শুক্রবারের সকালে সিনেমার পাতায় নিজের নামের মায়া ছাড়তে হবে। বয়স অল্প এই লাইনে জীবন সপে দিও না। পস্তাবে’। সেদিন আরেকবার পৃথুর বাবাকে বলা ঐ রেডিও শিল্পীর  কথা গুলো মনে পড়েছিল পৃথুর। পৃথু যখন সাংবাদিকতা করত তখন সাংবাদিকতার কোনো ডিগ্রী তার ঝুলিতে ছিল না। অল্প বয়সের জন্য সবাই ভাবত ইন্টার্ণ। অনেকেই জিজ্ঞেস করত কোন কলেজ? কোন ইয়ার? উত্তর ছিল না। তবে মনে মনে একটা ইচ্ছে ছিল সাংবাদিকতা নিয়ে পড়বে।
         
        ঠিক সেই সময়েই পৃথু ওদের কলেজের ‘ফোটোগ্রাফি’ কোর্সটার কথা জানতে পারে। কোর্স ম্যাটেরিয়াল শুনে পৃথু অবাক। মিডিয়া রিলেটেড এমন একটা কোর্স যাতে শুধু ছবি তোলা নয়,  ভিডিও, সাংবাদিকতা, সম্পাদনা, সিনেমা তৈরি, জনসংযোগ সবটাই সেখানো হবে। পৃথু যেন হাতে চাঁদ পেল। প্রথমে দেবেশ স্যার তারপর অনিমেষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে ভর্তি হল পৃথু। কিন্তু ক্লাস কবে থেকে কেউ বলতে পারল না, কারন পৃথুরাই প্রথম ব্যাচ। এদিকে সামনে গ্রাজুয়েশনের ফাইনাল পরীক্ষা, গ্রাজুয়েশনের নাম্বার দিয়ে যে কিচ্ছুটি হবে না সেটাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেছে পৃথু। ফাইনাল পরীক্ষার পাশাপাশি আবার জেক্সপো-এ বসল পৃথু। এবার স্বচ্ছ অনলাইন কাউন্সেলিং হল। পৃথু পেল সরকারী কলেজ। পছন্দের বিষয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। শুরু হয়ে গেল নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। প্রথম কয়েক দিন কলেজ গিয়ে পৃথু বুঝেছিল যে রোজ ক্লাস করতে হয় না। পড়াশোনার পাশাপাশি মিডিয়ার কাজ , টুকটাক ছোট ছবির কাজ চলতেই লাগল। তার মধ্যেই দেখতে দেখতে এসে গেল ছ’মাসের সেমেষ্টার এক্সাম। সংবাদপত্রে পৃথু জানাল যে সে কয়েদিন কাজ করতে পারবে না। পরীক্ষা আছে। ওরা বলেছিল, ‘এটা পড়লে চাকরী পেয়ে যাবে?’ পৃথু বলেছিল, ‘জানি না তবে পেতেও পারি’।
        ততদিনে এই সিনেমা, সাহিত্য, সংস্কৃতি জগতের বহু রথী মহারথীর সঙ্গে দেখা সাক্ষাত হয়েছে পৃথুর। ততদিনে পৃথু উপলব্ধি করেছে যে সাংবাদিকতা তার জীবনের অন্তিম লক্ষ্য হতে পারে না। আর সিনেমাই হোক কিংবা লেখালিখি, সারভাইভ করতে গেলে একটা চাকরি তাকে করতেই হবে। কুনাল বসু, সুমন ঘোষ, সুপ্রতিম সরকার
, গোর্কি মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য নারায়ন বিশ্বাস, কৌশিক ঘোষ, প্রস্মিতা পাল এরকম আরো ব্যাক্তিত্ব ধীরে ধীরে পৃথুর অনুপ্রেরনা হতে শুরু করল।
        তারপর একদিন সেই লোকাল কলেজ থেকে ফোন।   ফোটোগ্রাফির ক্লাস শুরু হবে। এক বছরের ডিপ্লোমা। পৃথু হিসাব করে দেখল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার আগেই এটা সে পাশ করে যাবে। অর্থাৎ একই বছরে সার্টিফিকেট ক্ল্যাশ করবে না। পৃথু এল ক্লাস করতে। দুটো কম্পিউটার, একটা টিভি, দেওয়ালে একটা ক্যামেরার ছেঁড়া ছবি লাগানো ঘরে শুরু হল ক্লাস। কিন্তু সে এক আজব ক্লাস। বই নেই, দিস্তা দিস্তা নোটস নেই, চক-ডাশটারের খসখসানি নেই। শুধু স্যার বলছেন তার অভিজ্ঞতার কথা, আর ছাত্ররা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে। খটকা লাগলেই প্রশ্ন করছে। এভাবেই থিওরিটিক্যালি কাজ শিখেছে পৃথুরা। কোনো শিক্ষক হয়ত আবার দেওয়াল জুড়ে প্রোজেক্টরে চালিয়ে দিয়েছেন কখনও সত্যজিত রায়, কখনো কুইন্টিন ট্যারেন্টিনো, কখনো প্রভু দেবা কখনও বা রন ফ্রিক্র। ক্লাস জুড়ে সিনেমা দেখতে শেখা। এডিট প্যাটার্ণ শেখা। ইলিনা ম্যাডাম নিতেন নিউজ রিডিং আর পিস টু ক্যামেরা। অনর্গল কয়েক মিনিট কথা বলতে শেখা। সোমবার দুপুরের ফোটোগ্রাফি ক্লাস পৃথুকে শিখিয়েছিল যে ক্যামেরায় চোখ রাখলে ক্যামেরা ম্যান হওয়া যায় কিন্তু ফোটোগ্রাফার হতে গেলে লাগে দৃষ্টিকোন। স্ক্রিপ্ট রাইটিঙের ক্লাস শিখিয়েছে কীভাবে সিনেমার মধ্যে সাহিত্য কে মিশিয়ে দেওয়া যায়। যখন ওদের ষ্টুডিওটা তৈরি হয় তার প্রতিটা ষ্টেপ  পৃথু দেখেছে। দেওয়ালের ওপর ফোম পেষ্টিং, তার ওপর পর্দা লাগিয়ে কীভাবে সাউন্ড প্রুফ করা হয়। একটা ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল ক্যামেরায় কীভাবে ছবি তুলতে হয়, কীভাবে সাউন্ড রেকর্ড করতে হয়।  সেই সময়ে ওদের কোর্সের একটা প্রোজেক্ট হয়েছিল ‘আর্ন হোয়াইল ইউ লার্ন’। অর্থাৎ শিখতে শিখতে উপার্জন। পৃথুকে বিশেষ সফটওয়্যারের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। যাতে গোটা কলেজের আই-কার্ড তৈরী করা যায়। পৃথু আবার কয়েকজন কে শিখিয়েছিল। টিম করে আই-কার্ড বানানো ছিল ঐ প্রোজেক্টের অনর্গত একটা কাজ। পৃথুদের নিজেদের বিকাশের জায়গা ছিল ওদের কলেজের প্রি-ন্যাক পিরিয়ড। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিভাগীয় পত্রিকার প্রথম প্রিণ্ট ভার্সন নিজে হাতে সম্পাদনা করার সু্যোগ পেয়েছিল পৃথু । শিখেছিল কীভাবে অফিসিয়াল কাজকর্ম করতে হয়, ডেটা ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। কীভাবে প্রেজেন্টেশন রেডি করতে হয়, কীভাবে রিসার্চ ওয়ার্ক করতে হয়, কীভাবে ডকুমেন্টেশন করতে হয়।  পৃথুদের পি.আর পাবলিসিটির ক্লাস নিতেন যিনি, তিনি একদিন ক্লাসে নিজের কথা বলতে গিয়ে উনি বলেন, “ক্ষিদেটাই আসল, ক্ষিদেটা বাড়াও, তাহলেই উন্নতি করবে”। এই কথাটাও পৃথুর পাথেয় হয়ে যায়। 
        দূর্ভাগ্যবশত পড়া চালাতে চালাতে পৃথু বোঝে যে তার এই নানান দিকে পড়াশোনাটা তার সহকর্মীদের ঈর্ষার বিষয়, কারন পৃথু অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়ে নানান অজুহাতে তাকে অ্যাসাইন্মেন্ট দেওয়া বন্ধ করে দেয় এন্টারটেন্মেন্ট বিভাগ। আটকে যায় পৃথুর ন’মাসের পারিশ্রমিক। এই পারিশ্রমিকের ওপর খানিকটা হলেও পৃথু নির্ভরশীল ছিল। তখন আরেকটা ম্যাগাজিনে কাজ পেল পৃথু, তারাও কাজের পর টাকা দিতে চাইত না। কাজের টাকা পেত ৫ মাস পর। পড়তে পড়তেই  পৃথু বুঝতে পেরেছিল যে সিনেমা তৈরী কিংবা অভিনয়ের স্বপ্ন দেখা একজন শিক্ষানবিশ কিভাবে গোটা ইন্ড্রাষ্ট্রির কাছে মুরগী হয়ে যায়।
        ঠিক সেই সময়েই আনন্দবাজারের অন্দরমহলে গদিবদল, ইন্দ্রপতন, আত্ম-হনন-এর মত ঘটনা পৃথুকে নাড়িয়ে দেয়। দিনের পর দিন এমনটা চলার পর পৃথু সিদ্ধান্ত নেয় এই আলো-আঁধারি, মিথ্যা চটকদারির প্রেস দুনিয়া আর নয়। এক বছর পর ফোটোগ্রাফির ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েই পৃথু ফিরে যায় তার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্যাম্পাসিং-এর জন্য।  দুটো ক্যাম্পাসিং-এর পরই একটি সংস্থায় ট্রেনি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগদান করার সুযোগ পায় পৃথু।  ফোটোগ্রাফি কলেজের কমিউনিকেটিভ ইংলিশ ওকে সাহায্য করেছিল ইন্টারভিউতে, সেখান থেকে শেখা হ্যান্ডস অন ট্রেনিং গুলো ওকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দিল। সেখানেও প্রেজেন্টেশন বানাতে হয়, ডকুমেন্টেশন করতে হয়, লেবেলিং করতে হয় এবং টেক্সটাইল ইণ্ডাষ্ট্রি তে ফোটোগ্রাফি এবং ফটো এডিটিং-এর একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। ফোটোগ্রাফির একবছরের শেখা এবং শেখার বাইরের শেখাটাও সেখানে কাজে লাগায় পৃথু। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রমান করে ট্রেনি ইঞ্জিনিয়ার থেকে ঐ প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং রিসার্চ এণ্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মী পদে উত্তীর্ণ হয় পৃথু। পাশাপাশি লেখালিখি, ছবি সম্পাদনা, পরিচালনার কাজও চলছে তার।  
         এখন অনেকেই পৃথুকে জিজ্ঞেস করেন ভালো লাগে চাকরী করতে? পৃথুর উত্তর একটাই, ‘যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছি, সেই বিষয়-এর ওপরেই চাকরি করছি। আর চাকরিটার জন্য সার্ভাইভ করতে পারি’। আরেকটা প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়, ‘কম্পিউটার সায়েন্স, জার্নালিসম, না ইঞ্জিনিয়ারিং’? পৃথুর উত্তর, ‘তিনটেই’। কারন পৃথু বিশ্বাস করে যে কোনো কাজ করার জন্য সেই কাজের পটভূমিতে নুন্যতম পড়াশোনা থাকা জরুরী।  পৃথু তার কোম্পানিতে তার বিষয়গুলির একটার সঙ্গে আরেকটার সমন্বয় সাধন করতে পেরেছে। এবং আরো নতুন কিছু করার প্রচেষ্টায় আছে।
       
        আসলে আমাদের চারদিকে অনেকেই পড়ার আগেই ভাবতে বসে যান যে, ‘ওটা পড়লে চাকরি পাব? কাজে দেবে?’  কিন্তু পৃথু উপলব্ধি করেছিল পড়তে নয়, শিখতে আসতে হবে। আর যতদিন বাঁচবে ততদিন শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। অনেকেই আছেন যারা স্বল্প জ্ঞানেই বাচনশৈলীর কল্যানে বিশ্ব বিজয়ের কেতন ওড়ায়। তবে সে কেতন বেশিদিন ওড়ে না। একসময় ছিন্ন হয়ে ভূপতিত হয়।   
        পৃথুও কম্পিউটার সাইন্স পড়তে গেছিল, নম্বর পেতে চেয়েছিল, নমরের দৌলতে ভালো কলেজের তকমা জোটাতে চেয়েছিল কিন্তু খুব বেশী কিছু জানতে চায় নি। ফোটোগ্রাফি কলেজে আর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পৃথু শিখতে এসেছিল।  নাম্বার নিয়ে ভাবেনি। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পৃথুকে একটা চাকরি পাইয়ে দিয়েছে আর ফোটোগ্রাফি কলেজ ওকে ওর লক্ষের দিকে কয়েক যোজন এগিয়ে দিয়েছে।

        এসব সাতপাঁচ স্মৃতিচারণ করতে করতে পৃথুর মোবাইলটা বেজে ওঠে। অফিসের ডিপার্টমেণ্ট হেড সৌমিতা দির ম্যাসেজ,  “Wish you a very happy & prosperous 25th Birthday”। ঘড়ির দিকে তাকালো পৃথু। বারোটা বাজে…….।
       
বিঃদ্রঃ লেখায় বর্নিত ঘটনা এবং চরিত্রগুলি সম্পূর্ন কাল্পনিক। কোনো জীবিত বা মৃত ব্যাক্তির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।

প্রীতম পাল
১৪ জুন, ২০১৯