![]() |
ছবিঃ গুগল ইমেজস |
কয়েক দিন আগে ফেসবুকের দেওয়ালে
খ্যাতনামা এক প্রাক্তন সাংবাদিক বর্তমান সাংবাদিকদের লেখার গুনমান নিয়ে প্রশ্ন
করেছিলেন “ওরা কারা, যাদের লেখা রোজ সকালে বারান্দায় এসে পড়ে ?”। ২৯.০৩.২০১৯-এর ‘এই সময়’ সংবাদ পত্রের শিরোনামে থাকা “প্রযুক্তি বুঝতে হোঁচট খাচ্ছেন দেশের হবু
ইঞ্জিনিয়ার রা” শীর্ষক খবর টিও মনের ভেতর একই প্রশ্ন তুলে ধরল। একে পাতার
অনেক দাম তায় আবার কালির খরচ, তাই বোধ হয় জায়গার অভাবে ‘ছোট করে’ লিখতে গিয়ে গুগল
ট্রান্সলেটর সহায় থাকা প্রতিবেদকের অনেক কথাই বলা হয়ে ওঠে নি। আর তাঁর না বলা কথা
গুলো আদতে আঙ্গুল তুলে ছোট করছে দেশের হবু ইঞ্জিনিয়ার দের। তাহলে তাঁর না বলা কথায়
একটু আলোক পাত করা যাক।
প্রথমত
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলে দিতে হয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স এর মত এক কঠিন পরীক্ষা। আর বর্তমান
যুগে সুযোগ এতটাই এসেছে যে জয়েন্টে ‘ভ্যালিড র্যাঙ্ক’ থাকলেই সে ইঞ্জিনিয়ারিং
পড়ার যোগ্য। হোক না তাঁর র্যাঙ্ক ৩০,
৩০০, ৩০০০ বা ৯০,০০০। অর্থাৎ যে কোনো র্যাঙ্কেই
লাখ খানেক ডোনেশনে খোলা থাকে “অলিগলি”-র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দরজা। দরজা তো খুলল,
এবার কলেজের অন্দর মহল টা? কারন ভর্তির আগে অলিগলি-র প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
তো ৯৫% প্লেসমেন্ট-এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই খবরের কাগজেই বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কিন্তু
আস্তে আস্তে দেশের হবু ইঞ্জিনিয়ার রা চোখের সামনে দেখে যে কতটা “উল্লু” বানিয়েছে
তাঁদের কলেজ। বাইরে থেকে যতটা ঝাঁ চকচকে ভেতর টা ততটাই ঝাঁঝরা। ক্লাস আছে, শিক্ষক
নেই। ল্যাব আছে, আধুনিক ইন্সট্রুমেন্ট নেই, লাইব্রেরি আছে, সেখানে সাব্জেক্টের
আধুনিক বই নেই। তাহলে সেমেষ্টার
প্রতি ছাত্রপিছু হাজার চল্লিশেক টাকা
কোথায় যায়? ব্যবসা, স্রেফ ব্যবসা। কলেজ খুলে ছাত্রছাত্রীদের মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে
শুদ্ধু টাকা কামিয়ে যাচ্ছে এই বেসরকারী কলেজগুলো। শহরের বুকে বা শহরতলিতে যুব
সম্প্রদায়ের স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা করার লাইসেন্স দিচ্ছে কারা? কারাই বা ঠিক করল যে র্যাঙ্ক
করলেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া যাবে? খোঁজ নিয়েছেন কখনও? ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যারা পড়ান,
তাঁদের কত জন স্থায়ী শিক্ষক? বলতে পারেন? মাসের শেষে কতটাকা মাইনে পান তাঁরা ?
শুধু মাত্র শিক্ষকতার আদর্শেই তাঁরা পড়িয়ে যাবেন? তাদের-ও তো মাসের শেষ হয়, পকেটে
টান পড়ে। তাই যেতে হয় বিকল্পের সন্ধানে।
আর সংখ্যা লঘু যারা স্থায়ী পদে চাকুরী রত তাঁরা তো ভুলেই গেছেন যে বাইরের
দুনিয়াটা কীভাবে প্রতিনিয়ত দ্রুত বদলে যাচ্ছে। অস্থায়ী সহকর্মীদের কাঁধে ভর করে শীতঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন তাঁরা। নতুন প্রযুক্তি
নিয়ে তাঁদের নিজেদেরই কোনো আগ্রহ নেই, তাঁরা কী না করবেন ছাত্রদের বিকাশ। শুধু
বেসরকারী কলেজ কেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরাও ছাত্র উন্নয়নের থেকে রাজনৈতিক উন্নয়নে
বেশী ব্যাস্ত হচ্ছেন আজকাল। আচ্ছা রাজনৈতিক ময়দান এ আসতে
তাঁদের কে বা কারা বাধ্য করল বলুন তো? তাঁরা রাজনৈতিক সম্মেলনে স্লোগান আওড়াতে
পারেন কিন্তু মান্ধাতার আমলের পুরোনো সিলেবাস বদলানোর জন্য সোচ্চার হতে পারেন না।
আসলে তাঁদের মধ্যেও যে ভয় কাজ করে। কারন নতুন কে তো সবাই স্বাগত জানাতে পারেন না।
পাছে পরিবর্তনের জোয়ারে নিজের শক্ত খুঁটি আলগা হয়ে যায়। নতুন কিছু শিখতে গেলে তো
সেখানে সময় ব্যয় করতে হবে, তার থেকে সেই সময়ে কটা প্রাইভেট টিউশনি করলে পকেট ভরে। টিউশন আবার সেই সব ছাত্রছাত্রীকেই তিনি দেবেন
যারা প্রতি ছ’মাশে হাজার চল্লিশেক টাকা কলেজের ক্যাশ কাউন্টারে জমা করছে, কিন্তু
কলেজ থেকে তার প্রাপ্তির পরিমান শূন্য। এখানেই আরেকটা প্রশ্ন ওঠে কত টাকা রোজগার
থাকলে ছেলে মেয়ে কে এমন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো যায়? তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং কী বড়লোকের
পড়া? পড়াশুনো কী কেবল তবে ধনীদের জন্যই? ঠিকই তো, অর্থাভাবে অনেকেই পড়তে পারেন না
আবার ছেলে মেয়েকে পড়ানোর জন্য অনেককেই বেচতে হয় তাঁদের ঘটি-বাটি। কিন্তু ফলাফলে জোটে এক রাশ হতাশা। সরকারী কলেজ
গুলোতে মাসিক মাইনে অনেক কম হলেও সেখানে উন্নয়নের জন্য লাগে সরকারী অনুমতি। আর
সরকারের ছায়া মানেই আঠারো মাসে বছর। অনুমতি
মিললে বা আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার মত টাকা স্যাংসান হলে সেই যন্ত্রপাতি চালানোর মত
শিক্ষক পাওয়া হয়ে যায় দুস্কর। তাদেরকে পাঠাতে হয় ট্রেনিং-এ। কয়েকদিনের ট্রেনিং এ
সবটা তো আর রপ্ত হয় না। রপ্ত করতে হলে নিজেদের-ও সময় দিতে হয়। আর সময়টাই হয়ে যায়
কাল। গুটি কয়েক শিক্ষক ট্রেনিং নিয়ে এলেও সেই অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করার আগেই
ছাত্রদের শুনতে হয়, “অনেক দামী মেশিন। খারাপ হয়ে গেলে তোমাকেই ক্ষতিপূরণ দিতে
হবে”। একে তো কষ্টে শিষ্টে পড়াশুনো তারপর যদি আবার ক্ষতিপূরনের বোঝা চাপে? আগ্রহ
চলে যায় অনেক ছাত্রছাত্রীর।
ইঞ্জিনিয়ারিং
শিক্ষার মূল কথাই হল ইন্ডাস্ত্রির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ শেখা। আর তার জন্য প্রয়োজন
ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ট্রেনিং। গোটা ভারতের কথা ছেড়ে দিলাম, আচ্ছা শুধু মাত্র
পশ্চিমবঙ্গেই বিগত দশ বছরে কটা নতুন ইন্ডাষ্ট্রি হয়েছে বলতে পারবেন? এখানে রাস্তায়
বড় বড় হোর্ডিং-এ বণিক সম্মেলনের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় “Bengal means Business ” কিন্তু নতুন শিল্প কে খুঁজতে হয় দূরবীন দিয়ে।
ইন্ডাস্ট্রি-ই যেখানে ধুঁকছে, সেখানে আবার ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ট্রেনিং ! যেসব
ইন্ডাস্ট্রি আছে তাঁদের কেউ রাজি হয় টাকার বিনিময়ে কেউ বা বিনামূল্যেই এক দিন, তিন
দিন, পাঁচ দিন বা সাতদিনের ট্রেনিং দেবার। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তাল মেলানোর
সুযোগ খুব কমই দেন তাঁরা। প্রথমত নিজেদের কর্মপদ্ধতি বাইরের ছেলেমেয়েদের সামনে
তাঁরা দেখাতে অনিচ্ছুক থাকেন। দ্বিতীয়ত “ইন্ডাষ্ট্রি কর্তৃপক্ষ” মনে করেন অত্যাধিক
ছাত্র-ছাত্রী সমাগমে তাঁদের কর্মসংস্কৃতি বিঘ্নিত হয়। এদিকে আবার ইন্ডাস্ত্রির তুলনায় ছাত্র সংখ্যা
এতটাই বেশী যে সব কলেজ থেকে সকল ছাত্র ইন্ডাস্ট্রির দরজা তো দূর ইন্ড্রাষ্ট্রি
পাড়া তেই ঢুকতে পারেন না। তবে এই বিষয় গুলো সবটাই নির্ভর করে কলেজের ট্রেনিং ও
প্লেসমেন্ট অফিসারের হাতযশের ওপর।
এরপর আসে সেই মূহুর্ত যার অপেক্ষায় থাকে ছাত্র থেকে অভিভাবক, আত্মীয় থেকে অনাত্মীয় সকলে। হ্যাঁ, ক্যাম্পাসিং-এর মূহুর্ত। বলা বাহুল্য নাম করা কতিপয় বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ৮৫ শতাংশ সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাড়া আর কোথাও “ক্যাম্পাসিং” উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না। এই না হওয়া জায়গা গুলোয় শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের হতাশা ব্যাঞ্জক ঘেরাও, কথায় কথায় তিন অক্ষর, চার অক্ষরের বন্যায় প্রিন্সিপাল, টিপিও রাও বোধ হয় ভুলতে বসেন তাঁদের পিতৃ-মাতৃ পরিচয়। প্রতিবছর ঘটে চলা শ’য়ে শ’য়ে ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত সংক্রান্ত এই ‘ছোট্ট’ ঘটনা গুলোও আবার খবরের কাগজের শিরোনামে আসে না। এ তো গেলো ‘না’-দলের কথা। আর যারা হ্যাঁ-এর দলে থাকেন তাঁরা মাতেন এক আজব খেলায়। আর সেটাই হয় শিক্ষাবর্ষের সেরা প্রহশন। হয়ত আইটি কোম্পানি ক্যাম্পাসিং-এ আসছে তাদের সফটওয়্যার ডেভেলপার পোষ্ট-এর জন্য। । কিন্তু ক্যাম্পাসিং-এ বসছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র রা। বা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির ব্যাক অফিসের চাকরি, ক্যাম্পাসিং-এ বসছে ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল বা টেলিকমিউনিকেশন-এর ছাত্র রা। কারন কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাঁরা মাইনে কম দেবে কিন্তু তাঁদের মত করে গড়ে পিটে নেবে। নিজেদের যোগ্যতার বিচার না করেই তাঁরা যে কোনো মূল্যের যে কোনো চাকরিতেই যোগদান করছে কারন এতগুলো টাকা খরচ করে তাঁরা এতগুলো বছর ধরে পড়ছেন আর পরবর্তী কালে চাকরি না পেলে আছে নানান সমস্যা। সেখানে যা পাওয়া যায় সেই ভালো বলে যেকোনো প্যাকেজেই তাঁরা যেকোনো সংস্থায় যোগদান করে। এর পেছনে আবার কিছুটা হলেও দায়ী থাকেন কলেজের ‘ব্যার্থ’ টিপিও রা। কারন তাঁদের দূর্বল পি.আর. স্কিল ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করে ট্রেডের বাইরে গিয়ে পছন্দের বিপরীতে হেঁটে চাকরি গ্রহন করতে। আর যারা ট্রেডের চাকরি করবে বলে মন শক্ত করে নেয় তাঁদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকেই নিতে হয়।
ক্যাম্পাসিং শেষ। এবার জয়েনিং। ছোটখাটো কোম্পানি রা মুখের কথায় জয়েন করতে বলে আর বড় কোম্পানিরা দেয় অফার লেটার। প্রথমে ট্রেনি তারপর স্টাফ। ট্রেডের বাইরে এসে যারা কাজ করেন তাঁদের শিখতে হয় নতুন করে আর ট্রেড থেকে যারা আসেন তাঁরা নতুন ভাবে নিজেদের ঝালিয়ে নেন। এবার কোম্পানির কোনো জিনিসকে আধুনিকীকরণ বা পরিবর্তনের ভাবনা তরুন মনে জাগলেই তার পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে যায় পুরোনো কর্মচারীরা। কারন পরিবর্তনের জোয়ারে তলিয়ে যেতে পারেন পুরোনোরা। তাই ছলে বলে কৌশলে জং ধরা ম্যানেজমেন্ট-ই কোম্পানির পরিকাঠামোকে আধুনিক করেন না। কাজেই পিছোতে পিছোতে এক সময় মুখে কুলুপ এটে যায় নতুন ইঞ্জিনিয়ারদের। ভবিষ্যতের পথে তাঁরাও পিছিয়ে পড়েন। এভাবেই দিনের পর দিন চলতে চলতে এক সময় ব্যাপারটা ‘গয়ং গচ্ছ’ তে চলে আসে। পিছতে থাকে দেশ। হোঁচট খায় ‘হবু’-রা।
পুনশ্চঃ আমি নিজেও একটি সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। আমার বেলায় কলেজের ৯৫% ছাত্র ছাত্রী ক্যাম্পাসিং-এ চান্স পায় এবং তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ট্রেডেই সুযোগ পায়। পরবর্তী কালে যারা ট্রেড পরিবর্তন করেন তাঁরা নিজেদের ভাবনায় করে। ওপরের লেখায় সমস্ত ঘটনা কিছু আশে পাশের ঘটনা আর কিছু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সংকলিত। এই লেখা কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বা ‘টিপিও’-কে আঘাত করার জন্য নয়।
প্রীতম পাল
৩ এপ্রিল, ২০১৯
এরপর আসে সেই মূহুর্ত যার অপেক্ষায় থাকে ছাত্র থেকে অভিভাবক, আত্মীয় থেকে অনাত্মীয় সকলে। হ্যাঁ, ক্যাম্পাসিং-এর মূহুর্ত। বলা বাহুল্য নাম করা কতিপয় বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ৮৫ শতাংশ সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাড়া আর কোথাও “ক্যাম্পাসিং” উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না। এই না হওয়া জায়গা গুলোয় শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের হতাশা ব্যাঞ্জক ঘেরাও, কথায় কথায় তিন অক্ষর, চার অক্ষরের বন্যায় প্রিন্সিপাল, টিপিও রাও বোধ হয় ভুলতে বসেন তাঁদের পিতৃ-মাতৃ পরিচয়। প্রতিবছর ঘটে চলা শ’য়ে শ’য়ে ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত সংক্রান্ত এই ‘ছোট্ট’ ঘটনা গুলোও আবার খবরের কাগজের শিরোনামে আসে না। এ তো গেলো ‘না’-দলের কথা। আর যারা হ্যাঁ-এর দলে থাকেন তাঁরা মাতেন এক আজব খেলায়। আর সেটাই হয় শিক্ষাবর্ষের সেরা প্রহশন। হয়ত আইটি কোম্পানি ক্যাম্পাসিং-এ আসছে তাদের সফটওয়্যার ডেভেলপার পোষ্ট-এর জন্য। । কিন্তু ক্যাম্পাসিং-এ বসছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র রা। বা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির ব্যাক অফিসের চাকরি, ক্যাম্পাসিং-এ বসছে ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল বা টেলিকমিউনিকেশন-এর ছাত্র রা। কারন কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাঁরা মাইনে কম দেবে কিন্তু তাঁদের মত করে গড়ে পিটে নেবে। নিজেদের যোগ্যতার বিচার না করেই তাঁরা যে কোনো মূল্যের যে কোনো চাকরিতেই যোগদান করছে কারন এতগুলো টাকা খরচ করে তাঁরা এতগুলো বছর ধরে পড়ছেন আর পরবর্তী কালে চাকরি না পেলে আছে নানান সমস্যা। সেখানে যা পাওয়া যায় সেই ভালো বলে যেকোনো প্যাকেজেই তাঁরা যেকোনো সংস্থায় যোগদান করে। এর পেছনে আবার কিছুটা হলেও দায়ী থাকেন কলেজের ‘ব্যার্থ’ টিপিও রা। কারন তাঁদের দূর্বল পি.আর. স্কিল ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করে ট্রেডের বাইরে গিয়ে পছন্দের বিপরীতে হেঁটে চাকরি গ্রহন করতে। আর যারা ট্রেডের চাকরি করবে বলে মন শক্ত করে নেয় তাঁদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকেই নিতে হয়।
ক্যাম্পাসিং শেষ। এবার জয়েনিং। ছোটখাটো কোম্পানি রা মুখের কথায় জয়েন করতে বলে আর বড় কোম্পানিরা দেয় অফার লেটার। প্রথমে ট্রেনি তারপর স্টাফ। ট্রেডের বাইরে এসে যারা কাজ করেন তাঁদের শিখতে হয় নতুন করে আর ট্রেড থেকে যারা আসেন তাঁরা নতুন ভাবে নিজেদের ঝালিয়ে নেন। এবার কোম্পানির কোনো জিনিসকে আধুনিকীকরণ বা পরিবর্তনের ভাবনা তরুন মনে জাগলেই তার পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে যায় পুরোনো কর্মচারীরা। কারন পরিবর্তনের জোয়ারে তলিয়ে যেতে পারেন পুরোনোরা। তাই ছলে বলে কৌশলে জং ধরা ম্যানেজমেন্ট-ই কোম্পানির পরিকাঠামোকে আধুনিক করেন না। কাজেই পিছোতে পিছোতে এক সময় মুখে কুলুপ এটে যায় নতুন ইঞ্জিনিয়ারদের। ভবিষ্যতের পথে তাঁরাও পিছিয়ে পড়েন। এভাবেই দিনের পর দিন চলতে চলতে এক সময় ব্যাপারটা ‘গয়ং গচ্ছ’ তে চলে আসে। পিছতে থাকে দেশ। হোঁচট খায় ‘হবু’-রা।
পুনশ্চঃ আমি নিজেও একটি সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। আমার বেলায় কলেজের ৯৫% ছাত্র ছাত্রী ক্যাম্পাসিং-এ চান্স পায় এবং তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ট্রেডেই সুযোগ পায়। পরবর্তী কালে যারা ট্রেড পরিবর্তন করেন তাঁরা নিজেদের ভাবনায় করে। ওপরের লেখায় সমস্ত ঘটনা কিছু আশে পাশের ঘটনা আর কিছু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সংকলিত। এই লেখা কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বা ‘টিপিও’-কে আঘাত করার জন্য নয়।
প্রীতম পাল
৩ এপ্রিল, ২০১৯
No comments:
Post a Comment