ভালো থাকবেন স্যার


       প্রণাম

       ২০০৭ সাল। ক্লাস নাইনে সবে উঠেছিকেউ বা কারা যেন মাধ্যমিকের ঘণ্টাটা বাজিয়ে দিল। সভার মতে জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নাকি এই মাধ্যমিক। বই, খাতা, জ্যামিতি বাক্স হাতে দু'বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলাফল নাকি এতে প্রকাশিত হয়, মাধ্যমিকের শংসাপত্রই নাকি জীবনের অন্যতম মাইলষ্টোন। আর এই মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে বাঙালি বাবা-মায়েদের আতুপুতুপনা চিরকালই একটু বেশী। বাংলা-ইতিহাস-অংক-বিজ্ঞানের মতন বাবা  ইংরাজি পড়ার জন্য ভর্তি করে দিলেন পার্শবর্তী গৃহশিক্ষক শ্রী শম্ভুনাথ মন্ডলের কাছে। বাংলা মাধ্যমের ছাত্র হিসাবে ইংরাজি নিয়ে যে খুব ভিতী ছিল এমন টাও নয়। কিন্তু স্যার শুরু করলেন সেই গোড়া থেকে। মানে ইংলিশ গ্রামারের বেসিক -ওয়ার্ড, সেন্টেন্স থেকে ভয়েস চেঞ্জ, ন্যারেশন, ফ্রেজাল ভার্ব হয়ে প্যারাগ্রাফ, রিপোর্ট রাইটিং।  আর অদ্ভূত ভাবে পড়ার বিষয় গুলি এত বার তিনি বলতেন যেন স্মৃতির ক্যানভাসে খোদাই করে লেখা হয়ে যেতউচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় স্যারের ১-৪-৭-১০ ফর্মূলা যেকোনো দূর্বল ছাত্রছাত্রীকে পরীক্ষায় উতরে দিত। স্যারের সাহচর্যে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে ইংরাজিতে ভালো নম্বর -ও পেয়েছিলাম। তারপর কলেজ জীবনেও যখন যেখানে সমস্যা হয়েছে স্যার দেখিয়ে দিয়েছেন, ফোনেও  মিলেছে চটজলদি সমস্যার সমাধান।

       আজও ইংরাজি নিয়ে নানান সমস্যায় পড়লে অচেতনে মোবাইল ফোনের কন্ট্যাক্ট লিষ্টে স্যারের নাম্বার অব্ধি পৌছে যাই। কিন্তু তখনই মনে পড়ে স্যার তো নেই, ২০১৩-র ডিসেম্বর। এক রবিবারের সকালে ঘুম ভেঙ্গেছিল স্যারের মৃত্যু সংবাদে। আমাদের ছাত্রবেলার শিক্ষক দিবস, বিজয়া দশমী, নিউ ইয়ার, সরস্বতী পূজো স্যারের বাড়ি ছাড়া অসম্পূর্ণ ছিল। আজও বছর কাটে, শিক্ষক দিবস আসে, প্রতিমা ভাসান হয় কিন্তু চৌমাথার বাড়ির একতলার ঐ ঘরটা আর নৈপুকুরের ফ্ল্যাটের দোতলার ডাইনিং-এর দূরত্বটা বড্ড বেড়ে যায়।

      চার-পাঁচ বছরে শুধু শিক্ষা নয় দিয়েছেন এগিয়ে চলার সাহস। সেই সাহসটুকু নিয়ে কতটা সফল হতে পেরেছি জানি না তবে ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছি। ভয়কে জয় করতে শিখেছি।  আজকের শুভ দিনে এই লেখা টুকুই উৎসর্গ করলাম আপনাকেভালো থাকবেন স্যার।

প্রীতম পাল
৫ সেপ্টেম্বর,২০১৫






2 comments: