সংবাদ ও উত্তর বঙ্গ সংবাদ-এ প্রকাশিত
অপুর প্রতিনিধি হচ্ছি আমি
সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’র সেই ছোট্ট অপুর চরিত্রাভিনেতা সুবীর
বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন নিয়ে পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি নির্মান করেছেন ‘অপুর
পাঁচালি’। সেদিন ছিল ২৩ এপ্রিল,২০১৪। তার কাকাবাবু সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুদিন। সন্ধ্যায় সুবীর
বাবুর বাসভবনে, (৩২/২৭ চন্ডী ঘোষ রোড, কলকাতা ৪০) সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে
চা-এর আড্ডায়
সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি প্রীতম পাল।
প্রশ্নঃ সম্প্রতি ‘অপুর পাঁচালি’ মুক্তি পাচ্ছে। কতটা
এক্সাইটেড?
সুবীরঃ একটুও এক্সাইটমেন্ট নেই।
প্রশ্নঃ সে কী!আপনার জীবন নিয়ে সিনেমা.........
প্রশ্নঃ কৌশিক গাঙ্গুলির সঙ্গে আলাপ জমল কিভাবে?
সুবীরঃ আমার ভগ্নিপতির দোকান আছে গড়িয়াহাটায়। ওখানে
আমি বোধ হয় একদিন গিয়েছিলাম। তখন ভগ্নিপতি আমাকে বললেন ‘চা খাবে
নাকি’? আমি বললাম ‘হ্যাঁ, বলো’। আমাকে বসতে দিয়েছে, আমি বসেছি। ঐ খানে বোধ হয় কৌশিকের এক বন্ধু সে আমাকে দেখেছে, সে ক্যাসুয়ালি কৌশিককে বলেছে যে ‘ঐ ভদ্র লোক কে চেনো’? কৌশিক যথারীতি বলেছে ‘না, চিনি না’। তখন ও বলে ‘এই সেই ‘পথের পাঁচালি’র অপু ’। তখন ঐ দোকান থেকে ও আমার ফোন নাম্বার নেয়। আর আমার ঐ বোনের ছেলে কৌশিকের বন্ধুর কাছে পড়ত। সেই সূত্রে তাদের কাছ থেকে তারা আমার বাড়ির খবর টা নিয়েছে। সেভাবে কৌশিক আমার কাছে আসে এবং আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
প্রশ্নঃ ‘অপুর পাঁচালি’-র জন্য কৌশিক গাঙ্গুলিকে কতটা
সাহায্য করেছেন?
সুবীরঃ সম্পুর্নভাবে সাহায্য করেছি।
প্রশ্নঃ কৌশিক বাবু সেদিন ‘অপুর পাঁচালি’-র সাংবাদিক
সম্মেলনে বলছিলেন যে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু
ট্রিলজি’-র সঙ্গে আপনার জীবনের একটা অদ্ভুত মিল আছে.........
সুবীরঃ হমম... ঐ যে বললাম বিভূতিভূষণের জীবন দর্শনের
যে প্রতিনিধি অপু তার সঙ্গে বাস্তব জীবনের অপুর যে মিল সেটা আমার জীবনেও একই রকম।
প্রশ্নঃ মিল গুলো কীরকম?
সুবীরঃ এই যেমন পিতার মৃত্যু, বউ চলে যাওয়া, বাচ্চা
চলে যাওয়া। এই ব্যাপার গুলো পরপর ঘটে গেছে। এগুলো বিভূতিভূষণের জীবনেও ঘটেছে, আমার
জীবনেও ঘটেছে। তার সঙ্গে ধর লাইফ স্ট্রাগল। লাইফ স্ট্রাগল তো প্রত্যেক মানুষের
জীবনেই গোড়াতে আসে। পরবর্তী পর্যায়ে এই স্ট্রাগলটা কমে যায়। যখন নারায়ন আসেন। সেই
জন্যই বলছি এভ্রিবডি ইজ অপু এন্ড এভ্রিওয়ান ইজ হরিহর রায়। বিকজ এভ্রিবডি হ্যাভ অ্যান্ড হ্যাড টু স্ট্রাগল ফর
দেয়ার এক্সিসটেন্স। দিস ইস দ্য রিয়্যালিটি অফ লাইফ হুইচ ইস স ইন মিস্ত্রি।
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালি-র অপু চরিত্র তো বিশ্ব সিনেমার
একটা সম্পদ......
সুবীরঃ হতে পারে......
প্রশ্নঃ সেই চরিত্রাভিনেতা আপনি। কিন্তু আপনি নিজেকে
প্রচার বিমুখ করে রেখেছেন।
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালির পর ষাট বছর কেটে গেছে। এই
ষাটটা বছর আপনার কীভাবে কাটল?
সুবীরঃ যেভাবে কৌশিক অপুর পাঁচালিতে দেখিয়েছে।
সেভাবেই। অপুর সংসারে কাকাবাবু দেখিয়েছিলেন যে অপু দিনের বেলা প্রেসে কাজ করত আর
রাত্রিবেলা কলেজে পড়ত। আমিও দিনের বেলা ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ইন্সটিটিউশনে টেকনিক্যাল
কাজ শিখতাম আর রাত্রিবেলা কলেজ করতাম।
প্রশ্নঃ আপনার স্কুল লাইফ কোথায় কেটেছে?
সুবীরঃ আমার স্কুল অনেক গুলো ছিল। সেই জন্য কাকাবাবু
আমাকে ‘ফেলুদা’ বলতেন। প্রথম পড়ি ‘চিল্ড্রেন্স কর্নার’-এ। তারপর ‘কালীধাম’, সেখান
থেকে ১৯৫৭ সালে চলে এলাম টালিগঞ্জে। তারপর এখানে এসে ভর্তি হলাম ‘নৃপেন্দ্রনাথ’
স্কুলে। নৃপেন্দ্রনাথ স্কুলে একটু বাঁদরামি করলাম, তারপর বাবা নিয়ে গেলেন ‘খড়দহ
রামকৃষ্ণ মিশন’-এ। ওখানে গিয়ে যত আম গাছ, পেয়ারা গাছ সেখানে উঠতাম, ঝেড়ে খেতাম আর
ওখানে একটা বিরাট দিঘী ছিল সেখানে নৌকা
বাইতাম, আমি আর তড়িত সাহা বলে একটা ছেলে, ও বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন ছিল সাঁতারে।
ওখানকার মহারাজ রোজ বিকেলে নৌকো চড়তে ভালোবাসতেন, একদিন প্ল্যান করে ওনাকে নৌকোতে
তুলে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর মহারাজ
দেখলেন যে এ তো অতি বাঁদর ছেলে বাবাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন “শিগগিরি ও কে নিয়ে যাও।
ও ওর মায়ের কাছেই ভালো থাকবে। ও এতো দুষ্টু যে ও কে কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না”। তারপর সেখান থেকে এসে ১৯৫৯-এ গঙ্গাপুর স্কুলে
ক্লাস সেভেন-এ ভর্তি হলাম। ১৯৬৪-এ আমার হাইয়ার সেকেন্ডারি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু টাইফয়েড হল বলে ১৯৬৫ –এ
দিলাম।
প্রশ্নঃ কলেজ লাইফ?
সুবীরঃ বেশী দূর যাব না বলে বাড়ির কাছে ‘যোগেশ চন্দ্র
চৌধুরী কলেজ’-এ বি.কম-এ ভর্তি হলাম। তখন নকশাল আমল শুরু হয়ে গেছে। কলেজের সামনে খুন হয়ে গেল। ঐ দেখে পার্ট ওয়ান
পরীক্ষার পর আরও গেলাম না কলেজে। আই.টি.আই. তে ভর্তি হয়েছিলাম, ওখানে ফার্স্ট
হলাম। ওঁরা আমাকে সুযোগ দিল বার্নার্ড হিল্ডার্স-এ। ওখানে কোম্পানি শিক্ষানবিশ
হলাম। তারপর সেখানে কনফার্মেশন হয়ে গেল। ওখানেই চাকরি করলাম ২০০১ সাল অবধি।
প্রশ্নঃ ২০০১ থেকে আজ ২০১৪। কীভাবে কাটে আপনার
দিনগুলি?
সুবীরঃ আমার মায়ের ৯১ বছর বয়স। তিনি এখনও বেঁচে আছেন।
তাকে দেখভাল করার দায়িত্ব আমার। আমার স্ত্রী আছেন, মাঝে মাঝে বাপের বাড়িতে কেটে
পড়েন। (হেসে হেসে) সেই সময় রান্না করে খেতে হয়। কাজের লোক একটা ছিল, সে পালিয়ে
গেছে...... এই আমার জীবন।
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালির পরে কখনও অভিনয়ের সুযোগ আসে
নি?
সুবীরঃ হ্যাঁ (একটু টেনে), ওরে বাবা। পথের পাঁচালির
পর বহু সুযোগ এসেছিল। বিমল রায়, নিতীন বোস, মধু বোস....তখনকার দিনের বিখ্যাত পরিচালকরা
যাকে বলে বিগ হাউস, তারা আমাকে ডাকাডাকি করেছে। আমাদের লেক এভিনিউতে তখন ওনারা সব
থাকতেন। কিন্তু তখন তো ছোটো ছিলাম, বাবা মা দেয়নি।
প্রশ্নঃ ইচ্ছে ছিল?
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালির যখন শুটিং হয় তখন তো আপনার বয়স
আট......
সুবীরঃ আট বছর নয়...... আসলে পথের পাঁচালির শুটিং তো
শুরু হয়েছে ১৯৫১ সাল থেকে।(হাতের আঙ্গুলের গাঁট–এ গুনে নিলেন ) চার বছর ধরে শুটিং
হয়েছে। ১৯৫৫ সালের ২৬শে আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল। চার বছর লেগেছে এই কারনেই...
আর্থিক সমস্যা ছিল।
সুবীরঃ ঠিক তাই। যখন বিধান চন্দ্র রায় ২ লাখ টাকা দেন
তাও একবারে নয়, খেপে খেপে।
প্রশ্নঃ কাজটাতো প্রথম সত্যজিৎ রায় নিজেই শুরু করেছিলেন?
সুবীরঃ হ্যাঁ। তখন উনি ক্ল্যারিওন-এ ১৪০০ টাকা মাইনের
চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে পথের পাঁচালি করতে আসেন। তখন অনেকেই ওনাকে পাগল
বলেছিল। তখন বাজারে উত্তম-সুচিত্রার ‘সবার উপরে’, ‘পথে হল দেরী’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’
এই সব সিনেমা চলছে। সেখানে পথের পাঁচালি, কোনো গান নেই কিছু নেই, বিভূতিভূষণ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথাকথিত একটা গ্রাম বাংলার গল্প নিয়ে ছবি করলে কী কেউ দেখবে? কেউ
দেখবে না। এই নিয়ে কী চিত্রনাট্য তৈরী করা যায়? এসব প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু কাকাবাবুই দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে ঐ পথের
পাঁচালিকে ভেঙ্গে ছবি করা যায় এবং তিনি ট্রিলজি করেছিলেন, পথের পাঁচালি, অপুর
সংসার এবং অপরাজিত।
প্রশ্নঃ সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কীভাবে?
সুবীরঃ লেক রোডে উনি আমাদের পাশের বাড়ীতে থাকতেন। তখন
উনি অপু করার জন্য ২৫০ ছেলে দেখেছেন। পছন্দ হয় নি। তারপরে আমি একদিন আমার বাড়ির
সারাউন্ডিং এলাকার মধ্যে খেলছিলাম। ওনার মা আমাকে জানালা দিয়ে দেখেছেন। দেখে ওনার
বৌমা মানে আমার কাকিমা বিজয়া রায়কে ডেকে আমাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে ‘এই ছেলে টি
কে?’ তখন উনি বলেছেন যে ‘শান্তি বাবুর ছেলে।’ তারপর যাই হোক উনি লোক দিয়ে আমাকে
ডেকে পাঠিয়েছেন। সে এসে বলে দাদাবাবু ডাকছেন। আর আমি মনে করেছি ছেলেধরা, আমি দৌড়ে
মায়ের কাছে পালিয়ে গেছি। মা তাকে জিজ্ঞেস করেন যে তুমি কাকে চাইছ? তখন সে বলে যে
আপনার ওই ছেলেকে পাশের বাড়ির ভদ্রলোক ডাকছেন। বাবা জানতেন যে উনি একজন বড় মাপের
শিল্পী। বাবা এবং কাকাবাবু দুজনেই দুজন কে চিনতেন। একটা সময় উনি বাবার কাছে
ফিন্যান্সার চেয়েছিলেন যাতে উনি ছবিটা শেষ করতে পারেন। বাবাও অনেক চেষ্টা
করেছিলেন। তা যাই হোক বাবা রাজি থাকলেও মা রাজি ছিলেন না। তারপর একসময় আমি আর আমার
দাদা যাই ওনাদের বাড়িতে। সেখানে গেলে কাকিমা (বিজয়া রায়) ওনার মা আমাকে খুব আদর
করেন, টফি দেন তারপর কাকাবাবুর কাছে নিয়ে যান। তখন তো সিনেমা বলত না বলত
বায়োস্কোপ। কাকাবাবু বললেন “বায়োস্কোপ করব, তুমি কী করবে?” আমি কথা বলিনি। হ্যাঁ,
না কিচ্ছু বলিনি। শুধু ঘেটি টা নাড়িয়েছিলাম। এই যে মাথা নাড়িয়েছিলাম, কথা কম
এক্সপ্রেষণ বেশী—এইটা ওনাকে অ্যাট্র্যাক্ট করে। যার ফলে উনি আমাকে সিলেক্ট করেন।
তখন ওনার মা ওনাকে বলছেন “হ্যাঁ,রে মানিক তুই সারা কলকাতায় অপু খুঁজে বেড়াচ্ছিস আর
তোর বাড়ির পাশেই যে অপু আছে তাকে তুই দেখিশ নি!!”
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালির শুটিং-এর কোনো অভিজ্ঞতা যদি
বলেন?
সুবীরঃ পথের পাঁচালির শুটিং হয়েছিল বোড়ালে। ওখানে ছিল
জঙ্গল আর অজস্র হনুমান। ভীষন বিরক্ত করত। শুটিং-এ সবার জন্য প্যাকেট খাবার যেত আর
আমার জন্য কাকিমা বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে যেত যাতে আমার কোনো অসুখ-বিসুখ না হয়।
ট্রেনের দৃশ্যে টেলিগ্রাফের পোস্টে কান পাতার সময় শামুক-এ আমার পা কেটে গিয়েছিল।
তারপর দিদি আর আমি বৃষ্টিতে ভিজছি, দূর্গা বৃষ্টিতে চুল ভেজাচ্ছে আর আমি কুল গাছের
নিচে গিয়ে বসলাম। ঐ দৃশ্যটা মেঘ দেখে আসল বৃষ্টিতেই শুট করা হয়েছিল। ওখানে আবার
আমার পায়ে কুল কাটা ঢুকে গিয়েছিল। বচ্চন সিং-এর গাড়িতে করে আমি,দিদি (ঊমা
দাসগুপ্ত), সর্বজয়া, কাকাবাবু সবাই মিলে একসঙ্গে শুটিং-এ যেতাম, সন্ধ্যাবেলার আগে
আবার চলে আসতাম।
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালি যখন পুরস্কৃত হল, তখন কেমন
লেগেছিল?
সুবীরঃ ঠিক সেই সময়টাতে আমি ম্যানিলা যেতে পারি নি।
আমার টাইফয়েড হয়েছিল। আমি নিজে তিন বার টাইফয়েডে ভুগেছি। কাজেই ঐ সময় অ্যাওয়ার্ডটা
ওঁরা পাঠিয়ে দিয়েছিল। আর ১৯৯৯ সালে একদিন অফিস থেকে ফিরেছি, দেখলাম একটা পিওন হাতে
চিঠি নিয়ে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। দেখলাম
জার্মানির বন থেকে চিঠি পাঠিয়েছে। লেখা আছে “আমরা বন শহরে নতুন ছেলে মেয়েদের নিয়ে
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসব করছি সেখানে আপনি এবং পণ্ডিত রবিশংকর দুজনে উপস্থিত
থাকবেন। ম্যাসেজ বানী সব আমরা দেব, আপনি শুধু পাসপোর্ট-ভিসা করে চলে আসুন ”। তাতে
আমার হাজার ২৫ টাকা খরচ হয়েছে, কোট বানাতে হয়েছে। একাই করেছি সব তবে ওঁরা খুব সাহায্য করেছেন। ওখানে
রাইন নদীর ধারে একটা সুন্দর হোটেলে উঠলাম, প্রথম দিন বোকার মত জল খেয়ে নিয়েছিলাম,
তারপর দেখলাম দরজা আর দেওয়ালের সঙ্গে লাগানো ছোটো একটা বোর্ডের মত, টান দিলাম,
দেখলাম সাজানো বিয়ার রয়েছে। তারপর আর জল খাইনি, শুধু বিয়ার খেয়েছি। ১৫ দিন ওখানে
ছিলাম। প্রথমদিন ওখানে গিয়ে একটু রেষ্ট নিয়ে যেটা বলব সেটা লিখেছিলাম। ওঁরা তো
আবার ওদের মাতৃভাষা জার্মান ছাড়া কিছু বোঝে না। ওখানে ‘ধানখেয়ে’ মানে হচ্ছে
ধন্যবাদ। ঐ ‘ধানখেয়ে’ বলে ধন্যবাদ জানিয়ে,
লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান বলে , লট অফ থ্যাঙ্কস টু জার্মান পিপল বলে কোনোরকমে
একটা বক্তৃতা দিলাম। কী হাততালি!! আর ১৫ দিনের মধ্যে সেই বক্তৃতার সিডি আমাকে
পাঠিয়ে দিয়েছিল।
সুবীরঃ আমার
ঐ পাড়ায় জন্ম। জন্ম থেকে ওনাকে দেখে আসছি। আর উনি এত উঁচু জায়গায় পৌঁছে গেছিলেন যে
ওনাকে ডিশটার্ব করার কোনো মানসিকতা আমার ছিল না।
প্রশ্নঃ বিজয়া রায় বা সন্দীপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
সুবীরঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ। সন্দীপ রায় আমাকে বেশ কয়েকদিন
আগে শান্তিনিকেতনে ‘অপু ট্রিলজি’ থেকে ‘শাখা প্রশাখা’ পর্জন্ত একটা
রেট্রোস্প্রেক্টিভ অনুষ্ঠানে নিয়ে গেছিলেন। তারপর ‘আইনক্স’-এ একটা অনুষ্ঠানে দেখা
হয়েছিল। পথের পাঁচালি যখন হয়েছিল তখনও সন্দীপ হয়নি। যার জন্য কাকিমা আমাকে ছেলের
মত ভালোবাসতেন।
প্রশ্নঃ আপনার ব্যক্তিগত জীবনে অপুর স্মৃতি এখনো তাড়া
করে?
সুবীরঃ আমার জীবন টাই তো অপু। অপু তো আমাকে ছাড়ছে না।
বিভূতিভূষণের কাহিনীও যা আমার ‘পথের পাঁচালি’ও তা আমার জীবনের ‘অপুর পাঁচালি’ও তা।
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালির প্রিয় দৃশ্য কোনটা?
সুবীরঃ রেলগাড়ি। আর মাছ ধরার দৃশ্যের ঐ বুড়োটা, টাকে
জল পড়বে আর তৃতীয় হচ্ছে আমি দিদির মালাটা ছুঁড়ে ফেললাম, পানা গুলো সরে গিয়ে আবার
একই রকম হয়ে গেল।
প্রশ্নঃ রেলগাড়ির দৃশ্যের শুটিং টা কোথায় হয়েছিল।
সুবীরঃ শক্তিগড়-এ। রেললাইনের ধারে কাশবন-এ ভর্তি ছিল
জায়গাটা। আর রেলের লাইনম্যান,গেটম্যান কিচ্ছু ছিল না।
প্রশ্নঃ পথের পাঁচালির অপ্রিয় দৃশ্য?
সুবীরঃ দিদি মারা যাওয়া। ভীষন কেঁদেছিলাম। কলকাতার
‘বসুশ্রী’ সিনেমা হলে প্রিমিয়ার শো হয়েছিল, আমি গিয়েছিলাম।
প্রশ্নঃ আজ অবধি কতবার পথের পাঁচালি দেখেছেন?
সুবীরঃ ঠিক বলতে পারব না। তবে অনেক বার দেখেছি।
প্রশ্নঃ অপুর পাঁচালি দেখতে যাবেন?
সুবীরঃ ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর অফিসে ওরাই আমাকে ডেকে
নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে।
প্রশ্নঃ কেমন লেগেছে?
সুবীরঃ ভাল লেগেছে। নিজের জীবন টাকে মেলালাম। দেখলাম
মেলাতে পারলাম। আর ওই জায়গাটায় খুব হাসলাম। অসীমা বলছে “যখন তোমার টাইপের স্পীড
ছিল ২০ তখনও তুমি ৭:০০ টায় বাড়ি ফিরতে আর এখন স্পীড ৭০ এখনও ৭:০০ টায় বাড়ি ফেরো।”
প্রশ্নঃ অর্ধেন্দু বাবু, পরমব্রত ওদের কেমন লাগল?
সুবীরঃ বেশ ভাল।
প্রশ্নঃ আর পার্ণো?
সুবীরঃ বেশ ভালো অভিনয় করেছে মেয়েটা।
ছবিঃ সুমন দে সরকার
সংযোগ সহায়তাঃ পুষ্পল রায়
No comments:
Post a Comment